ঢাকা: ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে মানুষের আকৃতি, কমে যাচ্ছে মস্তিষ্কের আয়তনও। গত ১০ হাজার বছরে মানুষের এ দৈহিক সঙ্কোচন হয়েছে ১০ শতাংশ।
সম্প্রতি ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটির সামনে এমনই এক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মানব বিবর্তনের বিশেষজ্ঞ ড. মার্টা লার।
তিনি বলেন, ‘ক্রমশই ছোট হচ্ছে মানুষ। বর্তমান সময়ের মানুষ তাদের শিকারি পূর্বপুরুষের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ ছোট ও খাটো। আরও হতাশার বিষয় হচ্ছে, আমাদের মস্তিষ্কও ছোট হয়ে যাচ্ছে। ’
আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে প্রত্যেক মানুষের গড় ওজন ছিল প্রায় ৭৮ কিলোগ্রাম থেকে ৮৫ কিলোগ্রাম। আর বর্তমান মানুষের গড় ওজন মাত্র ৭২ কিলোগ্রাম থেকে ৭৪ কিলোগ্রাম। অপরদিকে আজ থেকে ২০ হাজার বছর আগে মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন ছিল ১৫০০ ঘন সেন্টিমিটার, যেখানে আধুনিক মানুষের মস্তিষ্ক মাত্র ১৩৫০ ঘন সেন্টিমিটার।
শরীরের আকার এবং মস্তিষ্কের এই সঙ্কোচনের জন্য বিজ্ঞানী ড. মার্টা আমাদের কৃষি ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন।
তার মতে কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষের খাবারে বৈচিত্র কমে গেছে। খামারে উৎপাদিত নির্দিষ্ট কিছু ফসল মানুষের দৈনন্দি খাদ্যের চাহিদা মেটাচ্ছে।
অপরদিকে আদিম মানুষেরা শিকার এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকে খাদ্য সংগ্রহ করত। ফলে তারা তাদের সহজলভ্য সব ধরনের খাদ্যই খেতে পারত।
তিনি বলেন, আধুনিক মানুষের খাদ্য তালিকায় এই বৈচিত্রহীনতার কারণে মস্তিষ্ক ও শরীরের শরীরের বৃদ্ধি ঘটাতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
মানবজাতির এ অবনতির জন্য অবশ্য তিনি কৃষির সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি নগরায়নের প্রভাবে স্বাস্থের ক্ষতি ও নতুন নতুন রোগব্যাধির বিস্তারকেও দায়ী করেছেন।
গবেষণার ফলাফল ব্যাখ্যায় ড. মার্ট ইথিওপিয়া ও ইসরাইলে পাওয়া প্রায় ১-২ লাখ বছর আগের মানুষের উদাহরণ টেনে আনেন। এই সব এলাকা থেকে পাওয়া জীবাশ্মগুলো আধুনিক মানুষের চেয়ে অনেক বেশি লম্বা, মোটাসোটা ও পেশীবহুল ছিল বলে জানান তিনি।
এ তত্ত্বটি আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়াতে পাওয়া আদিম মানুষের জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করেছেন বলেও জানান তিনি।
তবে আধুনিক মানুষের মস্তিষ্ক সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন ‘এর মানে এই নয় যে আমরা আদিম মানুষদের চাইয়ে কম বুদ্ধিমান। বরং আমাদের মস্তিষ্কের আয়তন ছোট হলেও আমরা তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৯ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১১