ঢাকা: অসংখ্য চৌম্বক বুদবুদ দিয়ে গঠিত একটি বিশাল বলয়ের মধ্যে সুরক্ষিত রয়েছে আমাদের এই সৌরজগত। নাসার অনুসন্ধানী অভিযানে নিয়োজিত ভয়েজার মহাকাশযান পৃথিবী থেকে নয় বিলিয়ন মাইল দূরের নক্ষত্রগুলোর দিকে যাত্রাকালে পাঠানো প্রাপ্ত তথ্য থেকে এ বিস্ময়কর তথ্য জানা গেছে।
নাসার ভয়েজার-১ এবং ২ আজ থেকে ৩৪ বছর আগে মহাকাশে প্রেরণ করা হয়। মানুষের তৈরি কোনো মহাশূন্যযান এতো দুরত্বে আর পাঠানো হয়নি।
বর্তমানে এরা ঘণ্টায় ৩৮ হাজার মাইল বেগে হেলিওসিথের মধ্য দিয়ে পরিভ্রমণ করছে। হলিওসিথ হচ্ছে আমাদের সৌরজগত এবং আন্তনাক্ষত্রিক শূন্যস্থানের মধ্যবর্তী সীমানা।
এর আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন আমাদের সৌরজগৎ একটি বক্র ও মসৃন চৌম্বকক্ষেত্র দিয়ে ঘেরা। কিন্তু পরে অনুসন্ধানী তথ্যে দেখা যায় বলয়টি আসলে ফেনার মতো। ভয়েজারের দুটি যানই মহাশূন্যের নতুন নতুন স্থান থেকে অনবরত তথ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ পাঠানো তথ্য দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে গেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। ওই চৌম্বক বলয়টি বক্র রেখার মতো নয় বরং সেটা সেটা আসলে বুদবুদের মতো যার একপ্রান্ত ফেনিল।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে কম্পিউটারে তৈরি মডেলে দেখা যাচ্ছে এক একটি বুদবুদ ১০ কোটি মাইল প্রশস্ত। সুতরাং এর একটি মাত্র বলয় অতিক্রম করতে ভয়েজারের কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে।
ভয়েজার-১ ওই বলয়ের ফেনিল অংশে প্রবেশ করে ২০০৭ সালের দিকে। অপরদিকে ভয়েজার-২ প্রবেশ করে এর এক বছর পরে। প্রথম দিকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেননি ভয়েজার আসলে কীসের তথ্য পাঠাচ্ছে। তবে এবার তারা একটা ভাল ধারণা দিতে সক্ষম হলেন।
নাসার অতিথি বিজ্ঞানী মেরাভ অফার বলেন, সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রটি পুরো সৌরজগতের সীমানা পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, নিজ কক্ষ পথে সবসময় ঘুরতে থাকে বলে সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রটি বারবার মোচড় খায় এবং ভাঁজ পড়ে যায়। সূর্য থেকে অনেক অনেক দূরে এ ভাঁজগুলো গুচ্ছাকারে থাকে।
চৌম্বক ক্ষেত্র যখন এভাবে ব্যাপকভাবে কুঞ্চিত হয় তখন চৌম্বক বলরেখাগুলো একে অপরকে অতিক্রম করে এবং সংযোগ-পুনসংযোগ ঘটে। অতিরিক্ত ভাঁজ বিশিষ্ট এমন ক্ষেত্রকে কখনো কখনো ফেনার মতো মনে হয়।
ইউসিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের অধ্যাপক জিম ড্রেইক বলেন, আমরা কখন্ইো ধারণা করিনি সৌরজগতের প্রান্তে এমন ফেনার মতো কোনো বলয় থাকবে। কিন্তু এখন দেখছি সেটা রয়েছে।
এই চৌম্বক বলয়ের কারণে আমাদের সৌরজগৎ বিভিন্নভাবে সুরক্ষা পাচ্ছে বলে ধারণা করছেন অনেক বিজ্ঞানী। এ প্রসঙ্গে ড. অফার বলছেন, এই চৌম্বক বুদবুদগুলো মহাজাগতিক রশ্মি থেকে আমাদের বাঁচাতে প্রথম প্রতিরক্ষা ব্যূহ বলে মনে হচ্ছে। যদিও পরীক্ষার মাধ্যমে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি এর প্রভাবটা আসলে ইতিবাচক না নেতিবাচক।
অপর পক্ষে আবার বলা হচ্ছে, মহাজাগতিক রশ্মি এসব বুদবুদের মধ্যবর্তী ফাঁক গলে বেরিয়ে আসতে পারবে। আবার বুদবুদের ওপর পড়লে এ ক্ষতিকর রশ্মি বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে এটা ভাল একটি সুরক্ষাব্যূহ হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ভয়েজার এই ফেনিল অংশের মধ্যে কেনো মাঝে মাঝে প্রবেশ করে আবার বেরিয়ে আসে? এ প্রশ্নের কোনো ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা দিতে পারেননি।
ড্রেইক বলছেন, প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণ নিয়ে তারা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করছেন। এর তাৎপর্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সৌরজগৎ নিয়ে অবাক করা সব তথ্য পাওয়া কেবল শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১১