ঢাকা: খোদ নিজ দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতাকর্মীরা ওবামার ওপর আস্থা হারিয়েছেন। তাদের ধারণা, হিলারি ক্লিনটন যদি প্রেসিডেন্ট হতেন, মার্কিন অর্থনীতির জন্য সেটা মঙ্গলের হতো।
আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকেই বেশি পছন্দ করছেন। হিলারি ২০১২ সালের নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার ভক্তদের আশা, তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলাবেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাদের বিশ্বাস, দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে ও বাস্তবনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এবং দলের জনপ্রিয়তা অক্ষুণœ রাখতে আগামী নির্বাচনে হিলারিই ভরসা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন বারাক ওবামা। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে অভিনব নির্বাচনী প্রচারণার জোরে রিপাবলিকান শিবিরের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
সবার আশা ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে এবার পরিবর্তনের দেখা মিলবে। বিশেষ করে কম আয়ের মানুষরা ভেবেছিল তাদের জন্য সামাজিক সেবার খাত সম্প্রসারিত হবে। কিন্তু গত দুই বছরে প্রেসিডেন্ট তার প্রতিশ্রুতির খুব সামান্য অংশই পূরণ করতে পেরেছেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামা প্রথম ধাক্কাটি খেলেন স্বাস্থ্যখাত জাতীয়করণ করতে গিয়ে। বিরোধী রিপাবলিকান তো বটেই নিজ দল ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অনেকেই তার এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়াল। শেষ পর্যন্ত এই নীতি পার্লামেন্টে পাস করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর জন্য সমাজতান্ত্রিক বলেও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
২০০৮ সালে শুরু হওয়া বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সন্তোষজনক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতাসহ নানা বিতর্কের মুখে গত বছরের প্রতিনিধি নির্বাচনে নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা।
পরে গত ২ মে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর তার জনপ্রিয়তা হঠাৎ করে কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু দু’মাস পরেই আবার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে শুরু করে।
সম্প্রতি ঋণসীমা নিয়ে বিতর্কে বিরোধী রিপাবলিকানদের শর্ত মেনে কোনো রকমে উৎরে গেলেও এর মধ্যেই জনপ্রিয়তার বারোটা বেজেছে প্রেসিডেন্ট ওবামার। গ্যালোপ, ওয়াশিংটন পোস্টসহ নানা প্রতিষ্ঠানের মতামত জরিপের ফলাফল তার বিরুদ্ধেই গেছে।
এমনকি দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে খোদ নিজ দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যেই সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে। তারা ওবামার ওপর আস্থা হারিয়েছেন তবে বিপরীত পক্ষে দলের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে সমর্থন জোরদার হচ্ছে।
সর্বশষে বাজেট ঘাটতি কমানোর ব্যাপারে বিরোধী রিপাবলিকানদের কাছে এক প্রকার আত্মসমর্পণ ওবামার প্রতি দলের আস্থায় ধস নামিয়েছে।
রিপাবলিকানদের ঘাড়ে ভর করে সম্প্রতি উত্থান ঘটা রক্ষণশীল গোঁড়া টি পার্টির চাপে কোনো প্রকার রাজস্ব বৃদ্ধি ব্যতিরেকেই সরকারি ব্যয় সংকোচন নীতি প্রণয়নে বাধ্য হয়েছেন ওবামা।
ওবামার জন্য সবচেয়ে খারাপ খবর হলো, ডেমোক্র্যাট দলের নীতিনির্ধারক ও বিশ্লেষকদের অনেকে নানা বিষয়ে গোপনে রিপাবলিকানদের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। তার অবস্থা এখন ঠিক সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মতো, যা তাকে একজন ব্যর্থ প্রেসিডেন্টে পরিণত করেছিল।
সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক ক্লিনটন সরকারের একজন কর্মকর্তা মরিস রিড ওবামা সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি আন্তরিকভাবে ভালো কিছু করতে চান। তিনি ভাবেন, সবাই বুঝি তার মতো সঠিক কাজটিই করতে চায়। কিন্তু অন্য লোকদের উদ্দেশ্য আসলে ভিন্ন। তাদের উদ্দেশ্য হলো আখের গোছানো এবং দলকে পুনরায় নির্বাচিত দেখা। ’
তিনি বলেন, ‘কঠোরভাবে রাজনৈতিক হয়ে উঠতে না পারাটা তার একটা দুর্বল দিক। কিন্তু ক্লিনটন ছিলেন এর ঠিক বিপরীত। প্রত্যেকটা সকাল যেন তিনি শুরু করতেন এমন একটা যুদ্ধ দিয়ে। একইভাবে হিলারিও একজন কঠিন মনোভাবের মানুষ। তিনি অনেক বেশি সংগ্রামী। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই তারা সবসময় অত্যাসন্ন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকেন। ’
ওবামা বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তাকারী ও তহবিল সংগ্রাহক সংকটে পড়তে পারেন, তাই আগামী ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার না যাওয়াই ভালো বলে মত দেন রিড। তবে সেই সঙ্গে ২০০৮ সালে দল থেকে মনোনয়ন পেতে হিলারির সঙ্গে ওবামা যে কাব্যিক লড়ায় দেখিয়েছেন সেই ঘটনাও স্মরণ করিয়ে দেন। তবে ওবামা হতে পারেন দ্বিতীয় জিমি কার্টার বা এক টার্মের প্রেসিডেন্ট এই ধারণাই বেশ শক্ত।
নর্থ ক্যারোলিনা ডেমোক্র্যাটের উপদেষ্টা গ্যারি পিয়ারস একই হাতাশা ব্যক্ত করলেন। ওবামা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তাকে দুর্বল বলেই মনে হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটরা চিন্তিত। সমর্থকরা আর একটি জাদু দেখতে চাচ্ছে। তারা বলাবলি করছে টি পার্টিকে সামলাতে দলে আরও প্রভাবশালী ও কঠোর কোনো নেতার প্রয়োজন রয়েছে। ’
এমন প্রতিকূল পরিবেশে হিলারি ক্লিনটনের পক্ষেই সাফাই গাইলেন গ্যারি পিয়ারস।
সম্প্রতি অধ্যাপক ড্রিউ ওয়েস্টার্ন লিখিত ও নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ওবামার ব্যর্থতার ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকও বটে। তার ওই নিবন্ধটি লিবারেলরা ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে ইন্টারনেটে বিলি করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১১