দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্ট পার্ক জুন-হাই ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মঙ্গলবার (৯ মে) আগাম নির্বাচন হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। এই নির্বাচনেই জয়লাভের পর বুধবার (১০ মে) রাজধানী সিউলে জাতীয় সংসদে (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেন মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী জে-ইন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির ৬৪ বছর বয়সী এ রাজনীতিক উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে দক্ষিণে আশ্রয় নেওয়া এক শরণার্থীর সন্তান। তিনি তার উদার ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।
প্রেসিডেন্ট পদে অভিষেক ভাষণে জে-ইন বলেন, আমাদের প্রথম কাজ হবে দক্ষিণ কোরিয়ায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো। এজন্য সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবো।
এরপর তিনি কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ফেরানোর জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ফেরাতে যা করার তা-ই করবো আমি। যদি দরকার হয়, তবে শিগগির ওয়াশিংটন ভ্রমণে যাবো।
‘আমি বেইজিং থেকে টোকিও, সব জায়গায় যাবো। এমনকি সুবিধামতো সময়ে পিয়ংইয়ং (উত্তর কোরিয়ার রাজধানী) সফরেও যাবো। ...এই কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ফেরাবোই। ’
সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনার বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী থাড সিস্টেম মোতায়েনের বিষয়েও ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সঙ্গে ‘তাৎপর্যপূর্ণ সমঝোতা’ করবেন বলে জানান জে-ইন।
অভিষেক অনুষ্ঠানের ভাষণে উত্তর কোরিয়ার প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের একেবারেই সহনশীল অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। যদিও জে-ইনের বিজয় এবং তার শপথ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি পিয়ংইয়ং। তবে জে-ইনের প্রতি উত্তরের রাজনীতিকদের দুর্বলতা রয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে খবরে প্রকাশ পেয়েছে।
এসব বিবেচনায় নিয়ে রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জে-ইন ক্ষমতায় বসার কারণে যুক্তরাষ্ট্র-জাপানসহ পশ্চিমাদের বেশ খানিকটা বেকায়দায় পড়তে হতে পারে দক্ষিণ কোরিয়ায়। কারণ দক্ষিণ কোরিয়ার ‘পক্ষ হয়েই’ পারমাণবিক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বিলাসী উত্তর কোরিয়াকে দমাতে এখানে সামরিক অবস্থান নিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। তবে বেকায়দার বাস্তবতা হয়তো সামনের দিনগুলোতেই দেখা যাবে।
জে-ইন তার অভিষেক ভাষণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো, যুব বেকারত্ব ঘোচানোসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধানেরও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
শরণার্থী ঘরের সন্তান জে-ইন ১৯৭০ এর দশকে ছাত্রাবস্থায় সেসময়কার সামরিক শাসক পার্ক চুং-হির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে অংশ নিয়ে কারারুদ্ধ হন। আর সেই চুং-হি’রই সন্তান সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট পার্ক জুন-হাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
এইচএ/