ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আরব-কাতার উত্তেজনা কি যুদ্ধেই গড়াবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৭
আরব-কাতার উত্তেজনা কি যুদ্ধেই গড়াবে? কাতারের ম্যাপ

উপসাগরে যুদ্ধ কি ফের বেঁধেই যাবে? আরব-উপসাগরীয় আট দেশ ও কাতারের মধ্যকার উত্তেজনা ক্রমেই বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্নই উড়ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে।

বিশ্ব নেতাদের পক্ষ থেকে সংযত হওয়ার আহবান ও মধ্যস্থতার চেষ্টা— কিছুতেই ছাড় দেওয়া বা আপোসের মানসিকতা দেখাচ্ছে না কোনো পক্ষ। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ৮ দেশের জোট কাতারের ওপর ‍আরোপিত অবরোধ প্রত্যাহারের শর্ত হিসেবে দোহাকে ১৩ দফা জুড়ে দিলেও সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে উল্টো ‘অভ্যন্তরীণ পররাষ্ট্রনীতিতে’ হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

এরমধ্যে গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক কূটনীতিক ‘আরও কড়া পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ায় পরিস্থিতি ‘পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন’-এ চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সন্ত্রাসবাদে মদদ, আঞ্চলিক অস্থিরতা তৈরি ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগে গত ৫ জুন সৌদি আরবের নেতৃত্বে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, মিশরসহ আট দেশ কাতারের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে। এরপর ওই দেশগুলো তাদের সব রকমের পথ ব্যবহারও বন্ধ করে দেয় কাতারের জন্য। যার ফলে কাতার এক ঘরে হয়ে পড়ে। এই অবস্থা গড়িয়েছে পঞ্চম সপ্তাহে।  

সংকট গভীর থেকে ঘনীভূত হচ্ছে গত ২২ জুন দোহাকে আরবদের ১৩ শর্ত বেঁধে দেওয়ার পর থেকে। আল জাজিরা বন্ধ, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক গুটিয়ে নেওয়া এবং কাতারে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধের দাবিসহ ওই ১৩ শর্তকে উড়িয়ে দিয়ে দোহা বলেছে, তারা কোনোভাবেই অভ্যন্তরীণ পররাষ্ট্রনীতিতে হস্তক্ষেপ বরদাশত করবে না এবং মাথা নোয়াবে না।  

এই অবস্থায় আরব আমিরাতের রাশিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ‘আরও কড়া পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক কিছু বিশ্লেষক ধারণা করেছেন, সংকট ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ পৌঁছে যাচ্ছে। এখান থেকে উভয় পক্ষেরই পেছনে ফেরা  কঠিন হয়ে পড়বে।  

তাদের এই শঙ্কাকে ভিত্তি দিচ্ছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক আইএচএস মার্কিট এর বিশ্লেষক ফিরাস মোদাদ, প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী চার্লস ডব্লিউ ফ্রিম্যান জুনিয়র ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়াসহ অনেকের বক্তব্য।

মোদাদ মনে করেন, কড়া পদক্ষেপ বলতে আরবরা তাদের মিত্রদের নিয়ে কাতারের ওপর আরও যে বড় ও বিস্তৃত আকারের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, তাতে দোহা দুর্বল হয়ে পড়লেও জবাব যে দেবে না তা নয়। এটা কোনো পক্ষের জন্যই ভালো নয়।

আর ইউরেশিয়া গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে শঙ্কা প্রকাশ করে, কাতার যদি তার নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন না করে কিংবা তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্টতার দৃশ্যপট বদল করে সরে না আসে, তাহলে সংকট আরও ব্যাপকতা পাবে।  

ডব্লিউ ফ্রিম্যান জুনিয়র বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের এ উত্তেজনা সংকটটিকে যুদ্ধে গড়াতে পারে। কাতারি ও তুর্কিরা বলছে আরবদের শর্তগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। আর তাই স্পষ্টতই আমরা একটা সংকটের মধ্যে আছি, যা যুদ্ধের সংঘাতে পরিণত হতে পারে।  

একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হেলিমা ক্রফ্ট বলেন, আরবদের শর্তগুলোর ধরণ এটাই প্রতীয়মান করে যে, সৌদি আরবের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কাতারের মসনদেই রদবদল করা। দোহা শর্তগুলো মানবে না তা জেনেও যদি এ শর্তগুলো দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে রিয়াদ কী চাইছে তার উদ্দেশ্য নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়!

এই কথার যুদ্ধের মধ্যে কাতারের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়ায় তুরস্ক। গত ৩০ জুলাই কাতারের সেনাঘাঁটিতে তুরস্কের সেনাবাহিনীর আরেকটি নতুন দল পৌঁছায়। গত সপ্তাহে দুই দেশের সামরিক মহড়া শুরু হয়।

অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আহ্বান জানাচ্ছেন সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটে উপসাগরীয় শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে।  

ইউরেশিয়া গ্রুপ বলছে, যদি সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয় কিংবা দু’দিকেই মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে, তাহলে কূটনৈতিক ব্যর্থতা বাড়তেই থাকবে। আর কূটনৈতিক ব্যর্থতার অর্থ সামরিক পন্থা সামনে আসা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৭
জিওয়াই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।