মাস চারেক আগেই সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ট্রুডোর বদান্যতায় সেসময় হাজারো সিরীয় শরণার্থী আশ্রয় পায় কানাডায়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আশ্রয় পাওয়া একদল শরণার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মুহাম্মদ ও আফরাহ বিলান।
কানাডায় আশ্রয় নেওয়ার পর আফরাহ’র পেটে বেড়ে উঠতে থাকে আরেক সন্তান। গত মে মাসেই তাদের ঘর আলোকিত করে এলো সেই সন্তান। ফুটফুটে সেই পুত্র সন্তানের নাম রাখার প্রসঙ্গ এলো। কী রাখা যায়? মুহাম্মদ-আফরাহ ভাবলেন, যেই মানুষটা তাদের অনেকটা দ্বিতীয়বার বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছেন, এই সন্তানকে দুনিয়ার শান্ত-সবুজ পরিবেশে চোখ মেলার সুযোগ দিয়েছেন, তার প্রতি তো কোনো ভালোবাসা-কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হলো না। এই সন্তানের নাম সেই জাস্টিন ট্রুডোর নামে রেখে ভালোবাসার খানিকটাও প্রকাশ করা গেলে কেমন হয়?
হলো তা-ই। মুহাম্মদ-আফরাহ’র ঘরে আসা নতুন অতিথির নাম রাখা হলো জাস্টিন ট্রুডো। পুরো নাম জাস্টিন ট্রুডো আদম বিলান। পুরো বিশ্ব গণমাধ্যম জানলো ভালোবাসা-শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে এই নামকরণের খবর। জানলেন ট্রুডোও।
কিন্তু প্রায় দু’মাস একই দেশে থাকলেও ব্যস্ততার কারণে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে দেখা হয়নি এই ট্রুডোর পরিবারের। হয়নি দেখা তাই দুই ট্রুডোরও।
অবশেষে শনিবার (১৫ জুলাই) হলো ‘বহুল প্রতীক্ষিত’ দেখা। শিশু ট্রুডোকে কাছে পেয়েই কোলে তুলে নিলেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। বেশ খানিকক্ষণ বুকে রেখে দিলেন আদর করেও। শিশু ট্রুডোর মা-বাবার চোখ যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না, তাদের দেশের নেতা ক্ষমতা টেকাতে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেশছাড়া হতে বাধ্য করেছেন তাদের। আর পরদেশের এই নেতা তাদের সন্তানকে বুকে আগলে নিয়ে করছেন আদর। দেখাচ্ছেন সুন্দর বিশ্বে গড়ে ওঠার স্বপ্ন।
আলবার্টার কালগারি স্ট্যাম্পেড উৎসবের প্রাতঃরাশে শনিবার দুই ট্রুডোর এই সাক্ষাতই আলোচনা তুলেছে কানাডিয়ান গণমাধ্যমসহ পুরো বিশ্বে। তাদের এই আলোচিত সাক্ষাৎ ক্যামেরাবন্দি করার হিড়িকও পড়ে উৎসুক মানুষজনের মধ্যে।
কানাডিয়ান সংবাদমাধ্যম জানায়, মন্ট্রিয়লে প্রথমে আশ্রয় নেওয়া বিলান পরিবার এখন থাকছে এই কালগারিতেই। সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো তার ‘মিতা’সহ বিলান পরিবারের জন্য শুভকামনা জানান। একইসঙ্গে অন্য শরণার্থীদেরও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের কথা বলেন।
হিসাব মতে, ট্রুডো ২০১৫ সালের নভেম্বরে দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত কানাডায় ৪০ হাজার সিরীয় শরণার্থী আশ্রয় পেয়েছে। এদের মধ্যে ১ হাজার আবাস গড়েছে কালগারিতে।
গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়াসহ সাত মুসলিম প্রধান দেশের শরণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ট্রুডো সেসময় টুইট করে জানিয়ে দেন, সংঘাত, সন্ত্রাস ও যুদ্ধ থেকে পালিয়ে বেড়ানো লোকজনের জন্য তার দেশের দরজা সবসময় খোলা থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
এইচএ/