ঢাকা, শনিবার, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পানিতে তলিয়েছে এশিয়া, ধুঁকছে বিরূপ জলবায়ুতে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
পানিতে তলিয়েছে এশিয়া, ধুঁকছে বিরূপ জলবায়ুতে পানিতে তলিয়েছে এশিয়া, ধুঁকছে বিরূপ জলবায়ুতে- ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বিরূপ আবহাওয়ায় ধুঁকছে পুরো এশিয়া। বন্যার পানিতে ভাসছে চীন, ভারত এবং বাংলাদেশ। বৈরী এ পরিস্থিতিতে নাগরিকদের জীবনযাত্রা যেমন ঝুঁকিতে পড়েছে, তেমনি প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতির এক চতুর্থাংশে। পরিকল্পিত নদীশাসন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যত পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। এশিয়ায় জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব নিয়ে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ‘এশিয়া আন্ডার ওয়াটার’ শিরোনামের এ প্রতিবেদনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৫০ সাল থেকে পৃথিবীতে বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে চীন, ভারত এবং বাংলাদেশে। বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি ক্যাথলিক দ্য লোভেন এর তথ্য অনুসারে ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বন্যায় ২২ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছে।

  এর মধ্যে ১৯৫৯ সালে চীনের প্রলয়ংকরী বন্যাতেই নিহত হয়েছে ২গ লাখ লোক।

জলবায়ু নিয়ে কাজ করা বিশ্বের প্রধান সারির প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেইঞ্জ’ (আইপিসিসি) তাদের এশিয়া বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, আবহাওয়া এবং জলবায়ুগত বিপর্যয়ের কারণে ইতিমধ্যে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে এশিয়া অঞ্চল। এশিয়ার এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতির এক চুতর্থাংশ।

তথ্যানুসারে, গত দশকে প্রতিবছরই চীন, ভারত এবং বাংলাদেশে বন্যার কারণে ১ হাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে।

দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় বন্যার অন্যতম কারণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে হিমালয় থেকে প্রবাহিত গঙ্গা, ব্রক্ষপুত্র এবং ইয়াংজি--এই তিনটি নদীকে।

ভারত এবং বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ এবং চীনের ২৫ ভাগ লোক এই তিন নদীর বন্যা অববাহিকায় বসবাস করছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৪ ভাগই নিয়ন্ত্রণ করছে এই তিন নদী। শুধু চীনের ইয়াংজি নদীর কথা যদি বলা হয়, তাহলে দেখা যাবে এর উর্বর সমতল ভূমি ও পানি ৪০ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
পানিতে তলিয়েছে এশিয়া, ধুঁকছে বিরূপ জলবায়ুতে- ছবি: সংগৃহীত
২০১২ সালে এশিয়ান ডেভলাপমেন্টের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার অনেক শহর, বিশেষ করে কিছু মেগা সিটি বড় বড় নদীর বদ্বীপেই গড়ে উঠেছে। আর সেখানকার বন্দরগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশ্ব অর্থনীতি।

যখনি ভারী বৃষ্টিপাত হয় তখনি নদীর পানি বেড়ে সমভূমি তলিয়ে যায়, প্লাবিত হয় নগর ও শহরাঞ্চল। এবছরই ইয়াংজি নদীর শাখায় অবস্থিত পাহাড়ি প্রদেশ হুনানে ৩.২ মিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। যা সতর্কমাত্রার চাইতেও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার কারণে নগরজীবন এবং সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে পানি নিঃসরণের যদি কোনো উপায় না থাকে তাহলে তা প্রকৃত বন্যার রূপ নেবে এবং ব্যাপক ক্ষতিসাধন করবে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সেক্টর ম্যানেজার অ্যাবাস জা বলেছেন, জলবায়ু বিপর্যয়ের কি প্রভাব তা বুঝতে হলে আমাদের থাকতে হবে এশিয়ার পাঁচ বছরের হিসেবে। মুম্বাই, সাংহাই, হেনয়, বেইজিং, নমপেনসহ এশিয়ার বড় শহরগুলোতে বড় বড় বন্যা সংঘটিত হয়ে আসছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।

কমনওয়েলথ সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অরগানাইজেশন (সিএসআইআরও) বিশেষজ্ঞ কিরনো বলেছেন, এ অবস্থাটা শুধু বন্যার সূচনাপর্ব নয়, বরং এর ফলে এশিয়াজুড়ে জীবনের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে। বন্যা-পরবর্তী ক্ষয়-ক্ষতি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে। পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়বে। যার জীবাণু এক বা তারও অর্ধেক ডিগ্রি তাপমাত্রায় পরিবেশে আরো সক্রিয় হয়ে উঠবে।
নতুন আরেক গবেষণা বলছে, এশিয়ায় বন্যার এ ভয়াবহতায় এখনো চালকের আসেন চলে আসেনি জলবায়ু পরিবর্তন।

সব বিশেষজ্ঞই একমত হয়ে বলেছেন যে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভবিষ্যতে মারাত্মক বন্যার ঝুঁকি এড়াতে হলে স্থানীয় এবং আঞ্চলিকভাবে পরিকল্পনায় পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। বিশেষজ্ঞ জা বলেন, বড় শহরগুলোর জন্য এক্ষেত্রে দুটি পথ খোলা আছে। একটি হল অবকাঠামোগত পরিবর্তন এবং অপরটি হলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, পূর্ব প্রস্তুতি, আগাম সতর্কতা, সবুজ বেষ্টনি তৈরির মতো ভালো উদ্যোগগুলো দেশ ও শহরগুলো গ্রহণ করতে পারে। আগাম সতর্কতায় এক ডলার ব্যয় করা মানে ক্ষতির পর চার থেকে আট ডলার ব্যয় করার সমান।

২০১০ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়, বাংলাদেশের রাস্তা, রেলওয়ে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে প্রয়োজন হবে ২.৬ বিলিয়ন ডলার।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে উদ্ধার পাবার জন্য শুধু স্থানীয় উদ্যোগ যথেষ্ট হবে না বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চীন, ভারত এবং বাংলাদেশের বন্যা অববাহিকাগুলোর বিষয়ে তিন দেশকে একজোট হয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। কিভাবে উৎকৃষ্ট উপায়ে বসত নির্মাণ এবং বন্যার পানি নিষ্কাশন পথ তৈরি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
জিওয়াই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।