শনিবার (২৯ জুলাই) ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও পাঞ্জাব হাউসে ক্ষমতাসীন দলের দু’টি পৃথক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হয় ক্ষমতাসীন মুসলিম লিগের বৈঠক।
দু’টি বৈঠকের পর মুসলিম লিগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া না হলেও কয়েকজন নেতার বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের প্রধান শাহবাজকে এখন কেন্দ্রীয় সংসদে (জাতীয় পরিষদ) নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। তিনি জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মুসলিম লিগের নেতা হিসেবে হবেন সংসদপ্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী।
৬৫ বছর বয়সী শাহবাজ এখন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করছেন। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি নওয়াজের শূন্য ঘোষিত আসন থেকে উপ-নির্বাচন করে তাকে জাতীয় পরিষদে আসবেন। ওই আসনটি মুসলিম লিগের ঘাঁটি বলে পরিচিত বলে তাকে ব্যালট নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হচ্ছে না। পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হলেই শাহবাজের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিশ্চিত হলেও দায়িত্ব স্থায়ী করার জন্য তাকে উতরাতে হবে আস্থা ভোট। আস্থা ভোটে জিতে যেতে পারলেই শাহবাজ আগামী বছরের জুনের নির্ধারিত সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবেন।
আর শাহবাজের এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অন্তত ৪৫ দিন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন শহীদ খাকান আব্বাসী। ৫৮ বছর বয়সী শহীদ নওয়াজের বেশ ঘনিষ্ঠ রাজনীতিক বলে পরিচিত।
যদিও অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান, জাতীয় পরিষদের স্পিকার আইয়াজ সাদিক, পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আহসান ইকবাল দায়িত্ব পেতে পারেন বলে নাম শোনা যাচ্ছিল। তবে মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত মুসলিম লিগ শেষ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির শহীদকেই অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব দিলো।
পানামা পেপার্স দুর্নীতি কেলেঙ্কারির মামলার রায়ে দায়িত্বরত পদে ‘অযোগ্য’ ঘোষিত হওয়ার পর শুক্রবার (২৮ জুলাই) নিজে থেকেই পদত্যাগ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ। ‘সংসদ ও আদালতের প্রতি সৎ ও সত্যবাদী না থাকার’ কারণে শুক্রবার সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত নওয়াজের বিরুদ্ধে ওই রায় দেন।
গত বছরের এপ্রিলে পানামা পেপার্সে প্রকাশিত লাখ লাখ নথিতে বিশ্বের শত শত রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের গোপন সম্পদের তথ্যের পাশাপাশি নওয়াজ ও তার পরিবারের নামও আলোচনায় আসে। এরপরই নওয়াজের পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামেন প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা ইমরান খান।
বেশ কিছু দিন রাজধানী ইসলামাবাদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে পরে মাঠের আন্দোলন থেকে সরে এসে নওয়াজকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে ইমরানের দল। সেই মামলায় গত এপ্রিলে প্রাথমিক শুনানি হলে বিভক্ত রায় দেন আদালতের বিচারপতিরা। এ কারণে তখন উতরে যান নওয়াজ।
তবে সেসময় নওয়াজ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গভীর অনুসন্ধানে যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) গঠন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই তদন্ত দল অনুসন্ধান শেষে আদালতে নথিপত্র উপস্থাপনের পর শুক্রবার ওই রায় ঘোষণা হয়।
পানামা পেপার্সের নথি অনুযায়ী, সেখানকার ল’ ফার্ম ‘মোসাক ফনসেকা’র মাধ্যমে শত শত ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক গোপনে সম্পদ আয় করে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে রেখেছেন। ফাঁস হওয়া ওই সাড়ে ১১ লাখ নথির মধ্যে নওয়াজের সন্তান মরিয়াম, হাসান ও হুসেইনের নামে ৮টি অফশোর কোম্পানি (করফাঁকি দিতে তথ্য গোপন রেখে সুবিধাজনক দেশে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি) থাকার তথ্যও আসে।
কিন্তু অভিযোগ প্রথম থেকেই উড়িয়ে দিয়ে নওয়াজ ও তার স্বজনরা বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, পাকিস্তানে কোনো বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়াদ পুরো শেষ করতে পারেননি। ১৯৯০ ও ১৯৯৯ সালে দুইবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় কোনোবারই মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি নওয়াজও। ২০১৩ সালে তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত মুসলিম লিগের এই সরকারপ্রধানের মেয়াদ শেষ হতে আর বছরখানেকেরও কম সময় বাকি ছিল। ঠিক এই সময়ে এসে তাকে বিদায় নিতে হলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এইচএ/
শাহবাজই ‘হচ্ছেন’ প্রধানমন্ত্রী, চূড়ান্ত দলীয় প্রধান পদে
নওয়াজ কি এবার আজীবন নিষিদ্ধ হচ্ছেন?
প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নওয়াজের ভাই শাহবাজ!
