ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

২১ বার জেলে যাওয়া আসামির অভিনেতা হয়ে ওঠার গল্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
২১ বার জেলে যাওয়া আসামির অভিনেতা হয়ে ওঠার গল্প তিহার কারাগারের বন্দিরা এখন আলোতে ফিরছেন

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বন্দিশালা হিসেবে পরিচিত দিল্লির তিহার কারাগার। ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এ কারাগারে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ হয় মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক একটি নাটক। নাটকের প্রধান চরিত্রে মুগ্ধতা ছড়িয়ে সবার মন জয় করা আকরাম কারাগারের সবার পরিচিত মুখ। কারণ মাত্র চার বছর আগে এই কয়েদিদের সঙ্গেই একই কারাগারে বন্দি ছিলেন আকরাম।

বন্দি থেকে আকরামের অভিনেতা হয়ে ওঠার গল্পটা কয়েক যুগ লম্বা। মোট ২৩টি বছর তিহার কারাগারে বন্দিদশায় কাটান আকরাম।

চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে মোট ২১ বার কারাগারের চৌকাঠে প্রবেশ করতে হয় তাকে। ২০১৩ সালে শেষবার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার চার বছর পর ফের তিনি প্রবেশ করেন ওই অন্ধকার ভবনের দরোজা দিয়ে। তবে এবার বন্দি হিসেবে নয়, মঞ্চ নাটকের অভিনেতা হিসেবে, মাথা উঁচিয়ে।

কারা প্রকোষ্ঠে অনুপ্রেরণা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে চার বছর আগে আকরাম জীবনকে বদলে ফেলার সংকল্পে মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন। নিজের প্রতিভা গুণে খুব দ্রুত উন্নতি করেন। এরপর কেবলই নিজেকে প্রমাণের গল্প।  

আকরাম এখন একটি থিয়েটার গ্রুপ চালাচ্ছেন দিল্লিতে। সেখানকার সুবিধাবঞ্চিত তরুণ অভিনেতাদের করে দিচ্ছেন প্রতিভা বিকাশের সুযোগ। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চস্থ হচ্ছে তার এই থিয়েটার গ্রুপের নাটক, হচ্ছে দারুণ আয়। অপরাধের কারণে একসময় আকরামের পেছনে পুলিশ লেগে থাকলেও এখন কর্মফলে তার জন্য অপেক্ষায় থাকেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজকরা, কখন তিনি আসবেন বলে ‘হ্যাঁ’ বলেন।

আসলে শুধু আকরাম নন, তিহার কারাগারের অনুষ্ঠানে নাচ, গান, নাটক, চিত্রকর্মসহ নানারকম প্রতিভা দেখান ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শতাধিক প্রাক্তন কয়েদী, যারাও জীবনকে বদলে ফেলেছেন আকরামের মতো করে।  

এই বদলে যাওয়ার গল্প নিয়ে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেই কথা বলছিলেন দিল্লি পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজি) সুধীর যাদব। তিনি বলছিলেন, কারামুক্ত কয়েদীদের পুনর্বাসন ও জীবনমুখী কর্মকাণ্ডের প্রতি উৎসাহ জাগাতেই এই ভিন্নধর্মী আয়োজন।

আকরামের মতোই আরেকজন সুরেন্দর সানি। কয়েক মাস আগেও কারাবন্দির জীবন যাপন করছিলেন তিনি। কিন্তু কারামুক্ত হয়ে সানি জীবন বদলে ফেললেন নাচের। অনুষ্ঠানের ফাঁকে একটি সংবাদমাধ্যমকে সানি বলছিলেন, ‘এক বন্ধুর পরামর্শে আমি নাচের ক্লাসে যাওয়া শুরু করি। আজকে যদি নাচের দুনিয়ায় পদার্পণ না করতাম, তবে নিশ্চিত আবার অপরাধ জগতে ফিরে যেতে হতো জীবিকার জন্য। ’

এমনই আরেক প্রাক্তন কয়েদী ধীরাজ বাজাজ। তিনি এখন তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করছেন নিজের সংগীতানুষ্ঠান। প্রতিটি অনুষ্ঠান থেকে আয় করছেন দেড় লাখ রুপি।  

ধীরাজের দেখাদেখি একই কারাগারের বন্দি ভাগিরাথও শুরু করেছেন সংগীতচর্চা। বর্তমানে তিনটি সংগীত একাডেমি চালাচ্ছেন ভাগিরাথ।

বদলে যাওয়ার এই ধারাটা যতো মুখর হবে, ততোই বদলে যাবে দিল্লি, বদলে যাবে ভারত। এমন দিনবদলই তো চাইছে ভারতবাসী। এই বদলের ডাক যে সুন্দরের, সুন্দর জীবনের।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
এনএইচটি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।