সোমবার (২৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই সাজা ঘোষণা করেন সিবিআই’র বিশেষ আদালতের বিচারক জগদীপ সিংহ। গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন একই আদালত।
সাজা ঘোষণার পর তৎক্ষণাৎ সংবাদমাধ্যম ও মামলার বাদী সিবিআই জানায়, রাম রহিমকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যার পর রায়ের কপি হাতে এলে আইনজীবীরা বলেন, আসলে দুই নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দু’টি হওয়ায় প্রত্যেক মামলায় ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রাম রহিমকে। এছাড়া, অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে ১৫ লাখ রুপি করে মোট ৩০ লাখ রুপি।
আরও পড়ুন
** ‘মুঝে মাফ করো’
** ধর্ষণের দায়ে রাম রহিমের ১০ বছর কারাদণ্ড
** রাম রহিমের সাজা: সিরসায় ফের সংঘাত
** রাম রহিমের সাজা ঘোষণায় উড়িয়ে আনা হলো আদালতকে
** দুপুরে ঘোষণা রাম রহিমের সাজা, নিরাপত্তা জোরদার
** রাম রহিম সিংয়ের সাজা ঘোষণা সোমবার
** কে এই ধর্মগুরু রাম রহিম সিং?
** হরিয়ানায় গুরুর সম্পত্তি থেকে হতাহতদের ক্ষতিপূরণের আদেশ
** ধর্ষণে দোষী গুরমিত রাম রহিম, ভারতজুড়ে সতর্কতা
** হরিয়ানায় গুরু-ভক্তদের তাণ্ডবে নিহত ৩১, সতর্কতায় দিল্লি
এ বিষয়ে সন্ধ্যার পর হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তার বলেন, রাম রহিম সিংকে মোট ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিনি ১০ বছর করে ২০ বছর কারাভোগ করবেন। দেবেন দুই মামলায় মোট ৩০ লাখ রুপি অর্থদণ্ডও। এরমধ্যে ১৪ লাখ রুপি করে দিতে হবে ধর্ষণের শিকার দুই নারীকে।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, সাজা ঘোষণার আগে মামলার বাদী সিবিআই ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কথা বলতে দেওয়া হয়। এসময় কথা বলেন রাম রহিমও। তিনি তার দোষ স্বীকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আদালতের কাছে মাফও চান। কিন্তু সিবিআই’র আইনজীবী মামলার ধরন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। সাজা ঘোষণার পর আরও বেশি ভেঙে পড়েন রাম রহিম।
কারাগার সূত্র জানায়, সাজা ঘোষণার পর এই ‘বাবা’র স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা হলেই তাকে কয়েদীর পোশাক পরিয়ে দেওয়া হবে এবং ‘বন্দি নম্বর ১৯৯৭’ হিসেবে কারাগারের একটি সেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী দুই নারী ও সিবিআই কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা রাম রহিমের দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড চেয়ে আবেদন করবেন। আর রাম রহিমের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা এই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করবেন। আশা করছেন, সর্বোচ্চ আদালতে এই সাজা পুনর্বিবেচিত হবে।
এদিকে, সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাম রহিমের কথিত আধ্যাত্মিক সংগঠন ‘ডেরা সাচা সৌদা’র সদরদফতর এলাকা সিরসায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সেখানে এরইমধ্যে দু’টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর মিলেছে। শুক্রবার দোষী সাব্যস্ত ঘোষণার পরই সিরসা, পঞ্চকুলাসহ হরিয়ানাজুড়ে ব্যাপক সহিংসতায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়। আহত হয় ৩ শতাধিক লোক।
তবে বিকেলে সাজা ঘোষণার পর সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী খাত্তার জানান, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে। কেউ যদি রাজ্যের শান্তি বিনষ্ট করতে চায়, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি রাজ্যে শান্তি ধরে রাখতে ‘ডেরা সাচা সৌদা’র অনুসারীদেরও সহযোগিতা কামনা করেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, রাম রহিম সিংয়ের সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে রয়েছে হরিয়ানা, পার্শ্ববর্তী পাঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশ। যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য সতর্ক রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বিশৃঙ্খলা এড়াতে রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীর গাড়িও।
১৯৯৯ সালে ওই দুই নারী অনুসারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে রাম রহিমের বিরুদ্ধে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর কাছে বেনামে যাওয়া চিঠিতে তোলা এ অভিযোগ তদন্তের ভিত্তিতে ২০০২ সালে রাম রহিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সিবিআই। এরপর সেই মামলার বিচার করতে হরিয়ানারই পঞ্চকুলায় বিশেষ আদালত স্থাপন করা হয়। ২০০৭ সালে শুনানি শুরুর মাধ্যমে দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে গত শুক্রবার রায় ঘোষণা হয়। এরপর কড়া নিরাপত্তায় সোমবার ঘোষণা করা হলো সাজা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
এইচএ/