রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাখাইন পরিস্থিতিতে অন্য কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপের বিপক্ষে তারা।
বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা বলেছেন, এটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখা জরুরি যে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিষয়ে হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে আরও অসঙ্গতি নিয়ে আসে। এতে আন্তঃধর্মীয় বিরোধ আরও বাড়তে পারে।
এই বার্তা এমন সময় এলো যখন সারাবিশ্ব হত্যাকাণ্ড বন্ধে মিয়ানমারকে আহ্বান জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া নিন্দার সুরে কথা বলছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বলা হচ্ছে বিশ্বের সব থেকে বন্ধুহীন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। অবিলম্বে সেনা অভিযান স্থগিত ও রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর সংখ্যা সোয়া চার লাখ ছাড়িয়েছে। বেসরকারি হিসেবে এটি পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া সহিংসতায় দেশটিতে প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের, এখানে বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটা আরও বেশি। অসমর্থিত কোনো কোনো সূত্রে এটি দশ হাজার।
সবরকম সংঘাত বন্ধে রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘দ্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’ এক মাসের জন্য অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সেদেশের সরকার সেটি মানেনি।
এদিকে বাংলাদেশের আকাশসীমা বারে বারে লঙ্ঘন করছে মিয়ানমার। এতে বাংলাদেশ প্রতিবাদলিপি দিয়ে যাচ্ছে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে। বাস্তবে কাজ হচ্ছে না কোনো।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা এসব বিষয় এড়িয়ে গিয়ে বলছেন, সংকট সমাধানে ধর্মীয় নেতাদের আলোচনার উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে মস্কো। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের বহু জাতিগোষ্ঠীর মুসলিম কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষস্থানীয় সংগঠনগুলোর যৌথ বিবৃতিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি, যারা রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে।
রাশিয়া মিয়ানমার সরকারের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন এই কূটনীতিক।
যদিও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মস্কো। তবে দেশটি আসলেই কী বাস্তবায়ন করছে সে বিষয়ে কোনো কিছু উঠে আসেনি বিবৃতিতে। আর বাস্তবেও কোনো বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়। তবে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রীর নেতৃত্বে কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করেছে মস্কো। ঘটনার শুরু গত ২৪ আগস্ট দিনগত রাতে রাখাইনে যখন পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘অভিযানের’ নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭/ আপডেট ১০৩০ ঘণ্টা
আইএ