ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

স্বাভাবিক হচ্ছে দার্জিলিং, ১০৭ দিন পর হরতাল প্রত্যাহার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
স্বাভাবিক হচ্ছে দার্জিলিং, ১০৭ দিন পর হরতাল প্রত্যাহার দার্জিলিংয়ের প্রখ্যাত পর্যটন স্পট বাতাসিয়া লুপ

অবশেষে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা। গোর্খাল্যান্ড নামে আলাদা রাজ্যের দাবিতে সেখানে গত ১২ জুন থেকে শুরু হওয়া হরতাল ১০৭ দিন পর বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে তুলে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশিসহ বিশ্ববাসীর আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র পাহাড়ি-মায়ার দার্জিলিং ফের পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বেশ কিছুদিন আগে থেকেই হরতাল কার্যকর না থাকলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছিল না বলে পুরোপুরি স্বাভাবিক হচ্ছিল না দার্জিলিং। এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং আন্দোলনের নেতৃত্বদাতা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে (জিজেএম) সংকট নিরসনে দিল্লির মধ্যস্থতার আশ্বাস দিলে মোর্চার উপ-প্রধান কল্যাণ দীবন বিবৃতি দিয়ে হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

এরপর বুধবার সকালে মোর্চাপ্রধান বিমল গুরুংও অডিও বার্তা দিয়ে হরতাল প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন নেতাকর্মীদের।

রাজনাথ সিং তার বিবৃতিতে জানান, দার্জিলিং সংকট সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ও পাহাড়ি দলের নেতাদের সঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করতে তিনি স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।  

এজন্য শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দার্জিলিংয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে জিজেএম প্রধান বিমল গুরুংকে হরতাল প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানান রাজনাথ।  

সমস্যা সমাধানের এই আশ্বাস এবং দুর্গাপূজার বিষয়টি মাথায় রেখে জিজেএম তাদের হরতাল তুলে নেয়। এ বিষয়ে বিমল গুরুং বলেন, ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অবশ্যই গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আলোচনা করতে হবে। নয়তো ফের হরতাল ডাকা হবে।

‘গোর্খাল্যান্ড’ নামে আলাদা রাজ্যের দাবিতে বামফ্রন্টের আমলে বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দার্জিলিং। মমতা মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামে জিজেএম।

যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে আলাদা রাজ্যের দাবি কোনোভাবেই মানা হবে না বলে বারবার জানানো হয়েছে। তবু এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় জিজেএম। গত জুন মাসের শুরুর দিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দার্জিলিং সফরকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জিজেএম সমর্থকরা। এই প্রেক্ষিতে ১০ জুন হরতালের ডাক দেয় জিজেএম। তারপর থেকেই কার্যত অচল হয়ে পড়ে দার্জিলিং। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৬ জুন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তার আগে সরিয়ে নেওয়া হয় বাংলাদেশিসহ সব পর্যটকদের। যারা আটকা পড়েন তাদেরও সরে যেতে বলা হয়।

এরপর রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জোরদার নিরাপত্তার মুখে দার্জিলিংয়ের পর্যটন ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। ৭ ও ৮ জুলাই নতুন করে সহিংসতা ছড়ালে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। তারপর ১৯ ও ২৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিস্ফোরণ ঘটলে আন্দোলনকারী মোর্চার নেতাদের মধ্যে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব, মোর্চা ছেড়ে বেরিয়ে যান বিনয় তামাং। এরপর তাদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যক্রম প্রতিরোধ বিষয়ক সেলে অভিযোগ করে রাজ্য সরকার।

এমন সব হিসাব-নিকেশে গত ২৪ আগস্ট মমতার কাছে চিঠি দিয়ে গুরুং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি দার্জিলিং গোর্খা পাহাড়ি পরিষদ (ডিজিএইচসি) বা গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন (জিটিএ) নামে বিশেষ স্বশাসিত পরিষদ গঠন করে পাহাড়িদের চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

তার চিঠির পর ২৯ আগস্ট রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্নে’ সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে অংশ নেন জিজেএম’র বিদ্রোহী নেতা বিনয় তামাং। তিনি বৈঠকের পর ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হরতাল প্রত্যাহার ঘোষণা দিলেও মোর্চার অন্য নেতারা তা মেনে না নেওয়ায় সে ঘোষণা কার্যকর হয়নি। এ নিয়ে আবার ‍মুখোমুখি হয় বিমল গুরুং ও বিনয় তামাংয়ের অনুসারীরা। মোর্চার প্রধান বিমল স্পষ্ট ঘোষণা দেন, তাদেরসহ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়া হরতাল প্রত্যাহার হবে না। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আশ্বাস দেওয়ায় মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব অবশেষে হরতাল প্রত্যাহার করলো।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, মঙ্গলবার হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণায় বুধবার সকাল থেকে জেলা শহরের কেন্দ্রস্থল চকবাজারসহ পুরো দার্জিলিং জনমুখর হয়ে উঠেছে। খুলেছে দোকানপাট। স্বাভাবিক রাস্তায় যানচলাচলও। কালিম্পং, লামাসহ অন্যান্য অঞ্চলেও ফিরেছে স্বাভাবিক অবস্থা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭/আপেডট ১৩৩৭ ঘণ্টা
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।