জীবনে বহু গুণী-বিনয়ী ট্যালেন্টের সাথে দেখা-পরিচয়, জানা-শোনা হয়েছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরাতো জ্ঞানে-গুণে সেরা।
তবে পাশাপশি বহু নির্বোধের সাথেও মোলাকাত ঘটেছে। শত উপহাস-লাঞ্ছনা-গঞ্জনায় এইসব নির্বোধের বোধাদয় ঘটে না। নিজের লোক হাসানো বেকুব কর্মকান্ড নিয়ে এই মানুষেরা দিব্যি সুখী থাকেন। অনেকটা আমার মতো, নিজের ব্যর্থতাগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট । গর্ব করার মতো আমার নিজস্ব কোনো মধুর স্মৃতি নেই। উল্ল্যেখযোগ্য কোনো ঘটনার বিবরণে বন্ধুদের দারস্হ হতে হয়। আমি যেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র ‘কাঁদো নদী কাঁদো’র ‘তবারক ভূঁইয়া’! নিজস্ব বলে কিছু নেই, সবই ধার করা।
সেরা নির্বোধের সঙ্গে আজই মাত্র পরিচয় ঘটলো বাংলানিউজের সৌজন্যে। ভাগ্যিস নির্বোধ ভদ্রলোকটি ভিনদেশি। পেশায় রাজনীতিক। হালের হাল হকিকতে তিনি মন্ত্রী। আছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। স্কুলের গণ্ডি পেরুতে না-পারা কল্যাণ সুন্দরম নামের ভদ্রলোকটি আছেন চেন্নাই রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এতটুকু পর্যন্ত সবকিছু ‘নিয়ম-মাফিক ঠিকঠাক’ ছিলো। বিপত্তি বাঁধলো যখন কল্যাণ সুন্দরম গেলেন স্কুল ফাইনাল দেবার জন্যে। সবার ‘মান-সম্মান’ জলাঞ্জলি দিয়ে গেলেন অন্য দশজনের সংগে সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা দিতে।
রাজনীতিবিদদের কী সার্টিফিকেটের জন্যে পরীক্ষা লাগে? একান্তই যদি পরীক্ষা দিতে হয় তাহলে ‘সিক বেড’ ব্যবস্হাতো ছিলোই। কিতাব খুলে কিংবা শিক্ষকদের সহায়তায় অনায়াসে কাজটি করা যেতো। নির্বোধ আর কাকে বলে, সবাইকে লজ্জায় ফেলে সুন্দরম গেলেন লাইন ধরে পরীক্ষা দিতে?
পুরুষের বিয়ে-শাদীর যেমন বয়সের কোনো গাছপাথর নেই, তেমনি রাজনীতিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতারও কোনো ‘প্রয়োজন’ নেই। আমাদের ‘নন ম্যাট্রিক’ নেতারা, রাজনৈতিক সচিবেরা কী দেশ পরিচালনায় কোনো অযোগ্যতা দেখিয়েছেন? রাজনীতিবিকরা তো বেবি ট্যাক্সি বা সিএনজি চালক নন যে তাদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ম্যাট্রিক পাশ হতে হবে? আমাদের গুণধর ছাত্রনেতাদের পরীক্ষা তাদের ‘ভক্তরা’ দিয়ে দিয়েছেন। পরীক্ষাকেন্দ্রে উনাদের জন্যে থাকে ভিন্ন ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’। থাকে পরিদর্শকবিহীন ‘সিক বেড’। কই বাঙালি জাতিতো কখনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকটে ভোগেনি?
‘ব্যাটা’ কল্যাণ সুন্দরম রাজনৈতিক ‘প্রজাতির’কলঙ্ক। নির্বোধ মানুষের উজ্জ্বল উপমা।
ইমেলঃ [email protected]
বাংলাদেশ সময় ১৭৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১১