বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ফাতাহ নেতা মাহমুদ আব্বাস ও হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া সংবাদমাধ্যমকে এ খবর জানান। মিশরের মধ্যস্থতায় দেশটির রাজধানী কায়রোয় সমঝোতা সংলাপ শেষে উভয়পক্ষের মতৈক্যের ভিত্তিতে এই চুক্তি সই হয়।
সংলাপে অংশ নেওয়া এবং চুক্তির বিষয়ে জ্ঞাত কয়েকজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানায়, চুক্তির আওতায় পশ্চিম তীর ও গাজা উভয় অঞ্চলের নিরাপত্তা, প্রশাসনিক ও সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়গুলো থাকবে এবং এসব পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে গঠিত ঐক্যবদ্ধ সরকারের হাতে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃত ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দু’পক্ষের বিরোধ নিরসনে আলোচনার ফল এই চূড়ান্ত চুক্তি। আমি এই চুক্তিকে স্বাগত জানাই।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে সমঝোতার আগ্রহের কথা জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, বিরোধ নিরসন হলে ফিলিস্তিনের সরকার পরিচালনা পদ্ধতি এবং বিশ্ব দরবারে সেখানকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব আরও কার্যকর হবে। তাতে ফিলিস্তিনি জনগণই লাভবান হবে।
সমঝোতায় আগ্রহ দেখিয়ে অবশ্য প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত মার্চে গঠিত হামাসের প্রশাসনিক কমিটি বিলুপ্ত করতে সম্প্রতি গাজার নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সেজন্য গাজায় বিদ্যুৎ বিলের হারও কমিয়ে দেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে হামাস তাদের কমিটি বিলুপ্ত করে সেপ্টেম্বরে এই আগ্রহের কথা জানায়। দু’পক্ষের আগ্রহ শেষ পর্যন্ত রূপ নিলো চূড়ান্ত চুক্তিতে।
২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত সবশেষ নির্বাচনে জয়লাভ করে গাজাভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন হামাস। কিন্তু বিবাদমান সংগঠন দু’টি ২০০৭ সালে সহিংসতায় জড়ালে হামাসের প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়াকে বরখাস্ত করেন পশ্চিম তীরভিত্তিক ফাতাহর নেতা প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এর জবাবে ফাতাহকে গাজা থেকে বিতাড়িত করে দেয় হামাস।
এরপর থেকে গাজা শাসন করছে হামাস, আর ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা পশ্চিম তীরের অংশ শাসন করছে ফাতাহ। ফাতাহর সরকারকে ‘ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ’ (পিএ) হিসেবে স্বীকৃতি দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু হামাসকে—বিশেষত সামরিক শাখার তৎপতার কারণে—সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমারা।
আগে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে পিএ’র প্রতি সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমর্থন থাকলেও ২০০৪ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত মারা গেলে ২০০৫ সাল থেকে হামাস-ফাতাহর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ফাতাহ পশ্চিমা মিত্রদের পরামর্শে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তির স্বার্থে সমঝোতার মধ্য দিয়ে চললেও হামাস তাদের স্বীকৃতি দিতে প্রত্যাখ্যান করায় এই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এরমধ্যেই ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হামাস আইন পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও ফাতাহর সঙ্গে জোট সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়। এর জেরে ২০০৭ পর্যন্ত সংঘাতে ৬ শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
এরপর ২০০৭ সালে হামাস-ফাতাহ পৃথক হয়ে যথাক্রমে গাজা ও পশ্চিম তীর অধীনে নিয়ে সরকার চালাতে থাকে। দু’পক্ষই নিজেদের ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করে। ফাতাহর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিনের অধিকার আদায়ে বিশ্ব পর্যায়ে সভা-সেমিনারে অংশ নিলেও হামাসের সামরিক শাখা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে। যার জেরে তাদের ওপর ইসরায়েলসহ পশ্চিমারা অবরোধ আরোপ করে।
তবে গত কয়েক মাসে উভয়পক্ষের নেতৃত্ব সমঝোতায় আগ্রহী হলে ফিলিস্তিনি জনমনে আশার সঞ্চার হয়। সমঝোতা চুক্তিটি সই হয়ে যাওয়ায় এবার ফিলিস্তিনি জাতি ঐক্যবদ্ধ সরকারের সুফল লাভের প্রত্যাশায় প্রহর গুনছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
এইচএ/