সেই দৈনিককে দীর্ঘ প্রায় দুই দশক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি যখন ২০১৪ সালে অব্যাহতি নেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই জনমনে কৌতূহল জাগে, ভারতের খ্যাতিমান এই সাংবাদিক যাচ্ছেন কোথায়? দু’মাসের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে ছেড়ে আসা পাক্ষিক সাময়িকী ‘ইন্ডিয়া টুডে’তে যান। দু’মাস পর সেখান থেকেও বেরিয়ে গেলে জল্পনা আরও বাড়তে থাকে, আসলে কী করতে যাচ্ছেন বর্ষিয়ান এ কাগজ-সাংবাদিক?
জানুয়ারিতে সামান্য ইঙ্গিতের পর আগস্টে এলো সেই জল্পনার জবাব।
কাগজের সংবাদকর্মীরা বিভ্রান্ত হলেও প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের কাছে নানা দিক থেকেই স্পষ্ট শেখর গুপ্তের মত দীর্ঘদিনের ছাপা পত্রিকার সাংবাদিকের অনলাইনে চলে আসার কারণ। আর তা হলো- পশ্চিমা বিশ্বের পাশাপাশি ভারতবর্ষেও অনলাইনের দাপটের কাছে কাগুজে পত্রিকার হার মানতে থাকা।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি’র এক হিসাব মতে, ২০১০ সাল থেকে ভারতে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে তীব্র গতিতে। সমান গতিতে বেড়েছে স্মার্টফোনসহ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারও। পত্রিকার পাঠক বাড়লেও সে তুলনায় তুমুল গতিতে বাড়ছে অনলাইন কনটেন্টের পাঠকও। স্বভাবতই ছাপা পত্রিকার তুলনায় বিজ্ঞাপনদাতার বেশি ঝুঁকছেন অনলাইন মাধ্যমে। ২০১৫ সালে যেখানে ইংরেজিভাষী দৈনিকগুলোর বিজ্ঞাপনপ্রাপ্তির হার বেড়েছে ৪ শতাংশ, সেখানে অনলাইন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের হার বেড়েছে ৩৮ শতাংশেরও বেশি হারে।
এই বাস্তবতাই শেখর গুপ্তের মতো কাগজের প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় সাংবাদিককে নিয়ে এসেছে অনলাইন মাধ্যমে। এ নিয়ে দিল্লির কেন্দ্রে প্রভাবশালী গণামধ্যমগুলোর পাড়া বলে পরিচিত ফ্লিট স্ট্রিটে ‘দ্য প্রিন্ট’র কার্যালয়ে গুপ্তের সঙ্গে কথা বলছিলেন এক সাংবাদিক।
সেই সাক্ষাতে রসময় গুপ্ত বলেন, ডিজিটাল মাধ্যম বললেই অনেকের ধারণা কনটেন্টের মান একটু নিম্ন থাকে। ‘দ্য প্রিন্ট’র কথা বলা হলে পাঠক মনে করে এখানে শ্রেষ্ঠ মানের কনটেন্ট পাওয়া যায়। প্রযুক্তির হাত ধরেই পাঠকের কাছে পৌঁছে যাবে ‘দ্য প্রিন্ট’।
গুপ্তের ‘দ্য প্রিন্ট.ইন’ রাজনীতি বিষয়ক সংবাদের প্লাটফর্ম। সাক্ষাৎকারে তিনিই জানান, তারা আপাতত রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে নিগূঢ় কনটেন্ট প্রকাশ করছেন। এটাকে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায় সাংবাদিকতার প্লাটফর্ম ব্লুমবার্গের আদলে ভারতের রাজনৈতিক সাংবাদিকতার ব্লুমবার্গ ভাবতে পারে।
‘দ্য প্রিন্ট.ইন’ আপাতত তাৎক্ষণিক সংবাদ প্রচারে যাচ্ছে না জানিয়ে শেখর গুপ্ত বলেন, আমরা এখন নির্দিষ্ট শ্রেণির পাঠক জড়ো করার চেষ্টা করছি। যারা রাজনীতি বিষয়ে ‘দ্য প্রিন্ট.ইন’কে ভরসা করবে। প্রভাবশালী রাজনীতিক, শিল্পপতি, আমলার মতো যারা দেশের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে থাকেন তাদের নিয়ে কাজ করছি আমরা।
এ লক্ষ্যে গুপ্ত ও তার ক’জন জ্যেষ্ঠ সহকর্মী ‘অফ দ্য কাফ’ নামে শিরোনামে সাক্ষাৎকারের একটি সিরিজও শুরু করেছেন। এর অংশ হিসেবে তারা সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন প্রভাবশালী রাজনীতিক, আমলা, আইনজীবী, অভিনেতা, শিল্পপতিদের। এই সাক্ষাৎকারে নীতি-নির্ধারণী নানা বিষয় ও রাষ্ট্রের পথচলা নিয়ে কথা হচ্ছে ‘দ্য প্রিন্ট’র।
গুপ্ত জানান, তারা প্রথমে নির্দিষ্ট শ্রেণির পাঠককে তাদের অনলাইনের প্রতি নির্ভরশীল করে ফেলবেন, যারা বিশ্লেষণধর্মী নিগূঢ় প্রতিবেদন পেতে ‘দ্য প্রিন্ট.ইন’কেই ভরসাস্থল ভাববেন। পরে এর নগদ আয়ের দিকে নজর দেবেন। তারা তাদের সংবাদ পরিবেশনগত অবস্থান অভিজাত পর্যায়ে নেওয়ার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন প্রচারও নেবেন সমান পর্যায়ে।
গুপ্তের সঙ্গে যারা কাজ করছেন তাদের বেশিরভাগই কাগজে পত্রিকার। এরপরও তিনি আশা করছেন, নিজেদের সর্বোচ্চটি দিয়েই ‘দ্য প্রিন্ট.ইন’কে নিয়ে আসবেন শ্রেষ্ঠত্বের কাতারে।
তারুণ্যে সাংবাদিকতায় পা রাখা ৬০ বছর বয়সী গুপ্ত তরুণ বয়সেই বিভিন্ন পুরস্কার জিতে নেন। দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে জাতীয় জীবনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০০৯ সালে ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেন। জনপ্রিয় কলাম ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’র লেখক ও এনডিটিভির তুমুল আলোচিত সাক্ষাৎকারভিত্তিক শো ‘ওয়াক দ্য টক’ এর উপস্থাপক এই সাংবাদিকও শেষ পর্যন্ত ‘ডিজিটালে’ নেমে পড়ায় এই প্রশ্নই জোর পাচ্ছে এখন, ‘এ কি অনলাইনের জয়যাত্রা?’
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
এইচএ/