জিনপিং ছাড়াও রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই কমিটিতে থাকা অপর ছয়জন হলেন- লি কেকিয়াং, লি ঝানশু, ওয়াং ইয়াং, ওয়াং হানিং, ঝাও লেজি ও হ্যান ঝেং। জিনপিংই মহাসচিব থেকে যাওয়ায় এবার তার কোনো উত্তরসূরী পেলো না কমিউনিস্ট পার্টি।
গত সপ্তাহে কমিউনিস্ট পার্টির রুদ্ধদ্বার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২ হাজার ডেলিগেটের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনেই চীনের আগামীর এ নেতাদের নির্বাচিত করা হয়। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) পার্টির আগের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বুধবার (২৫ অক্টোবর) শীর্ষ সাত নেতার নামসহ নতুন কমিটি ঘোষণা হয়। এদের সবাইকেই ‘প্রেসিডেন্টের লোক’ বলছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম।
ঘোষণা অনুযায়ী, মহাসচিব পদে পুনরায় অধিষ্ঠিত শি জিনপিং পদাধিকার বলে পরবর্তী পাঁচ বছরও প্রেসিডেন্ট থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী থাকবেন ২০১৩ সাল থেকে এ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত লি কেকিয়াং। জাতীয় সংসদ বা ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের (এনপিসি) সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন লি ঝাংসু। রাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরামর্শক পরিষদ চাইনিজ পিপল’স পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসি) প্রধান পদে দায়িত্ব সামলাবেন ওয়াং ইয়াং। দলের সচিবালয়ের সচিব হিসেবে কাজ করবেন ওয়াং হানিং। আর দলের দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান হিসেবে সবদিকে নজর রাখবেন ঝাও লেজি। এছাড়া উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন হ্যান ঝেং।
জিনপিং ও কেকিয়াং ছাড়া নির্বাচিত এই স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে সবাই-ই নতুন মুখ। এদের মধ্যে ঝাংসু ও লেজি প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। আর ২০২২ সালে পরবর্তী কংগ্রেসের সময় বয়স বিবেচনায় (সর্বোচ্চ ৬৭) স্ট্যান্ডিং কমিটিতে থাকার যোগ্য থাকবেন কেবল লেজি ও ইয়াং। এদেরই কেউ তখন মহাসচিব পদে দায়িত্ব পান কি-না তা সময়ই বলে দেবে। তবে দু’জনই যে দ্বিতীয় দফায় মহাসচিব হতে পারবেন না তা স্পষ্ট। এছাড়া কমিটির ঘোষণায় শি জিনপিংয়ের পর উত্তরসূরী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্যও কাউকে মনোনীত করা হয়নি।
পুনরায় মহাসচিব ও প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পর দেওয়া বক্তৃতায় জিনপিং সংবাদকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা অগ্রসর চীনকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরুন।
১৮ অক্টোবর পার্টির সম্মেলনে তিনি দীর্ঘ বক্তৃতায় বলেছিলেন, কমিউনিস্ট নেতৃত্বে চীনের প্রবৃদ্ধির মডেল দিনে দিনে উজ্জ্বল হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে এখন (কথা বলা ও সাহায্য চাওয়ার জন্য) নতুন বিকল্প এসেছে। আমাদের উচিত এখন বিশ্বমঞ্চে কেন্দ্রীয় আসন নেওয়া এবং মানবসভ্যতায় আরও বড় অবদান রাখা।
কমিউনিস্ট শাসন যত দীর্ঘতর হয়েছে, চীনে ততই কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে পশ্চিমাদের অভিযোগ রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের চোখে শি জিনপিং ক্ষমতায় আসার পর চীন আরও কর্তৃত্ববাদী হয়েছে, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর নেমে এসেছে খড়গ।
অতীত পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় তারা বলছেন, জিনপিং পরবর্তী পাঁচ বছরও ক্ষমতায় থাকলে চীনের বিরুদ্ধে বিগত অভিযোগগুলোরই পুনরাবৃত্তি হবে আরও জোরেশোরে।
অবশ্য পশ্চিমারা জিনপিংয়ের সমালোচনা করলেও কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা তার নাম এবং তার দর্শনকে দলের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে একমত হয়েছেন। এর মাধ্যমে জিনপিংকে দলের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ে পর্যায়ে অধিষ্ঠিত করা হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
এইচএ/
** মাওয়ের পর সবচেয়ে ক্ষমতাবান চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
** বিশ্বমঞ্চে চীনকে কেন্দ্রীয় আসন নিতে বললেন জিনপিং