ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তান হামলার দশকপূর্তি: কারজাইয়ের মূল্যায়ন

জাহাঙ্গীর আলম, নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১১
আফগানিস্তান হামলার দশকপূর্তি: কারজাইয়ের মূল্যায়ন

ঢাকা: আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বে ন্যাটোর সামরিক অভিযানের দশক পূর্তি হয়ে গেলো। ২০০১ সালে আল কায়েদার মিত্র তৎকালীন তালেবান সরকারকে উৎখাত করতে আফগানিস্তানে সরাসরি আক্রমণ চালায় পশ্চিমা জোট।

কিন্তু দশ বছর পরেও দেশটিতে এখনও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। বেড়ে গেছে সহিংসতা, জঙ্গি হামলা।

এক দশক পরে আফগানিস্তানের অবস্থা নিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই অনেকটা হতাশাই ব্যক্ত করেছেন। বিশেষ করে নিরাপত্তা ব্যর্থতাকেই জোর দিয়েছেন তিনি।

একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কারজাই বলেছেন, তালেবানের পতনের ১০ বছর পরেও তার সরকার এবং ন্যাটো আফগান জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

সেই সঙ্গে জঙ্গিবাদকে সমর্থন দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি। দেশটিকে তিনি জঙ্গিদের অভয়াশ্রয় বলে অভিহিত করেছেন।

২০১৪ সালের মধ্যেই পদত্যাগ করার কথা বলেছেন কারজাই।

আফগানিস্তানে ন্যাটোর ব্যর্থতা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার কথা বলেছেন যৌথ বাহিনীর সাবেক কমান্ডার। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে ন্যাটো তার লক্ষ্য অর্জনে এখনও অনেক দূরে।

সাক্ষাতকারে হামিদ কারজাই আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরুর পরবর্তী কয়েক বছরের নেওয়া নির্দিষ্ট কিছু সামরিক কৌশলের বর্তমান নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে পাকিস্তানে উপজাতি এলাকায় আশ্রয় নেওয়া তালেবান জঙ্গিদের মোকাবেলায় ব্যর্থতার কথাও বলেন।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর দিকে ২০০২-০৩ সালেই তালেবানের অভয়াশ্রয়ের দিকে ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানে আমাদের প্রতিবেশীদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত ছিল। ’

মার্কিন সমর্থনে ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে নানা অর্জনের বিষয় জোর দিয়ে বললেও জননিরাপত্তায় সরকারের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন কারজাই। এই ব্যর্থতাকে তিনি তার সরকার ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সবচে বড় অপূর্ণতা বলে উল্লেখ করেছেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে। সামরিক স্থাপনা এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই এখন সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। গত মাসে এরকম এক হামলায় নিহত হয়েছেন সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট শান্তি আলোচনার প্রধান বোরহানুদ্দিন রাব্বানি।

কারজাই স্বীকার করেন, তালেবানের এসব হামলা ঠেকাতে না পারা সরকারেই ব্যর্থতা। তবে এই সমস্যা বাইরে থেকে আসছে এবং তালেবানের সন্ত্রাসী হামলার ভূমিকায় পাকিস্তানের দায় আছে বলে ইঙ্গিত করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী। কিন্তু পাকিস্তানে তালেবানের অভয়াশ্রয় ভেঙে দেওয়া যাবে না, যদি না পাকিস্তান সরকার এ ব্যাপারে আফগান প্রশাসনকে সহযোগিতা করে। ’

২০১৪ সালের মধ্যে ন্যাটো ও যৌথ বাহিনী আফগানিস্তানে সম্মুখ যুদ্ধ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে তিনিও ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানান কারজাই। উত্তরাধিকার খুঁজতে এখনই কাজ শুরু করেছেন তিনি।

সরকারের দুুর্নীতির কথা স্বীকার করে ২০১৪ সালে যৌথবাহিনী প্রত্যাহারের পর এ অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করেন কারজাই। দেশে ব্যাপক দুর্নীতির জন্য তিনি বিদেশি কোম্পানি ও সরকারকেই দোষ দেন।

প্রসঙ্গত, গত দশ বছরে আফগানিস্তানে উন্নয়নের পেছনে ৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলার খরচ হয়ে গেছে কিন্তু উল্লেখযোগ্য কিছুই হয়নি।

এক দশকের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেক নিরপরাধ মানুষ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরেই সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০ হাজারেও বেশি বেসামরিক মানুষ। আন্তর্জাতিক বাহনীর সেনা নিহত হয়েছে আড়াই হাজরের উপরে, যার বেশিরভাগই আমেরিকান।

স্থায়ীত্বের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচে দীর্ঘ ভিয়েতনাম যুদ্ধকেও ছাড়িয়ে গেছে আফগান যুদ্ধ। যুদ্ধের পেছনে যতো জীবন ক্ষয় এবং মার্কিন জনগণের করের অর্থ খরচ হয়েছে তাতে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যেই এ যুদ্ধের প্রতি সমর্থন কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।