ঢাকা: মধ্য প্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে আট বাংলাদেশীসহ দশ জনেরশিরশ্চেদের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
মঙ্গলবার বিবিসি বাংলার ওয়েব সাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার দপ্তর সৌদি আরবে আট জন বাংলাদেশীসহ ১০ ব্যক্তির শিরশ্চেদের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মৃত্যুদণ্ড প্রথা স্থগিত ঘোষণার জন্য সৌদি সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের দপ্তরের একজন মুখপাত্র রুপার্ট কলভিল বলেছেন, ‘গত শুক্রবার ১০ জনকে প্রকাশ্যে শিরñেদের ঘটনায় তারা বিচলিত। ’
প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবে এক গুদামঘরে চুরি এবং সেখানে নিয়োজিত এক মিশরীয় নিরাপত্তা প্রহরীকে হত্যার দায়ে আটজন বাংলাদেশীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল৻
এদিকে আট বাংলাদেশীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দূতাবাসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মানবাধিকার সংগঠন মঙ্গলবার ঢাকায় রিট মামলা দায়ের করেছে। মামলায় বাংলাদেশের দূতাবাসের ভূমিকার ব্যাপারে তদন্ত দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঘটনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিল।
তবে মৃত্যুদ- ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি- এমন অভিযোগ ঢাকার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট করে।
সংগঠনটির পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ জানিয়েছেন, রিট আবেদনে সৌদি আরবে বাংলাদেশের দূতাবাসের ভূমিকার তদন্ত চাওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রিয়াদে বাংলাদেশের দূতাবাসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দু’একটি নাগরিক সংগঠনও ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিবসহ ঐ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।
তবে নাম প্রকাশ না করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উধ্বর্তন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই মৃত্যুদ- ঠেকাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের শিকার মিশরীয় নাগরিকের স্বজনরা ক্ষমা করতে রাজি না হওয়ায় কোন মীমাংসা করা যায়নি বলে তিনি জানান।
ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের পক্ষ থেকেও সংবাদ সম্মেলন করে একই বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আরেকটি অভিযোগে রিয়াদে আরও তিনজন বাংলাদেশী মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই তিনজনের বিষয়েও আইনগত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন এমন একজন অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকীর বক্তব্য দিয়ে বলা হয়েছে বাংলাদেশকে সোচ্চার হতে হবে। তার মতে, সৌদি আরবে শিরশ্চেদের ঘটনাসহ মানবাধিকার পরিপন্থী আইন যা রয়েছে, এগুলোর বিরুদ্ধে এখন বাংলাদেশের অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে এবং তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরতে হবে।
সৌদি আরবের যে অভিবাসন পদ্ধতি রয়েছে, সেই ‘কাফালা’ পদ্ধতিতে অন্যায় কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অনেক সুযোগ আছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এই ব্যবস্থায় বাংলাদেশ দূতাবাস বা কারো পক্ষেই কিছু করা সম্ভব হয় না। ফলে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
বাংলাদেশসহ যে সব দেশ সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি করে, তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামের সাহায্য নেওয়া উচিত বলে মনে করেন অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী।
মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে লোকবলের অভাব রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তাকে লাখ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিকের বিষয় দেখতে হয়। ফলে অনেকসময়ই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা অক্টোবর ১২, ২০১১