ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যেসব কারণে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ সন্দেহযুক্ত

জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১১
যেসব কারণে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ সন্দেহযুক্ত

ঢাকা: ওয়াশিংটনের একটি জনবহুল রেস্টেুরেন্টে বোমা ফাটিয়ে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ইরান। এ কাজের জন্য দেশটির সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা কুদস বাহিনী টেক্সাসে পুরাতন গাড়ি বিক্রেতা একজন ৫৬ বছর বয়সী ইরানি বংশোদ্ভূত মার্কিনিকে দিয়ে মেক্সিকান মাদক চোরাকারবারি গ্রুপের হিটম্যান ভাড়া করেছিল।



যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ কতোটা নির্ভরযোগ্য? অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, অভিযোগ সন্দেহযুক্ত। ইরান সরকার বা এর কোনো বৈধ অংশ এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে মনে করেন না তারা। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে পাঁচটি কারণ দেখিয়েছেন এই বিশ্লেষকরা।

কথিত ষড়যন্ত্র ইরানি কায়দার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ৩২ বছরের ইতিহাসে এলিট গার্ডের কুদস বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এরকম কোনো গুপ্তহত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কোনো নজির নেই। হত্যা পরিকল্পনার জন্য কুদসের সদস্যদের অভিযুক্ত করা হয়েছে যারা লেবাননের হেজবুল্লাহর মতো শিকারের অনেক কাছাকাছি গেছে এবং একটি উচ্চশক্তি সম্পন্ন গ্রুপকে ভাড়া করেছে।

মার্কিন তদন্ত অনুযায়ী, পুরাতন গাড়ি বিক্রেতাকে ভাড়া করা হয়েছে; যিনি ইরান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা সরাসরি স্বীকার করেছেন এবং ঔদ্ধত্যের সঙ্গে এক লাখ ডলার মূল্যমানের সরঞ্জাম সরবরাহ করার কথা বলেছেন। এই বিষয়টি কুদসের অপারেশন পদ্ধতির সঙ্গে যায় না।

সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা বোব বেয়ার বলেন, ‘একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়ার বিষয়টি ইরানের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। ’

তিনি বলেন, ‘খুব কম গ্রুপই আছে যারা ইরানের কুদস বাহিনীর চেয়ে চৌকস। তারা জানে, তারা কী করছে। বিকল্প হিসেবে তারা তাদেরই ব্যবহার করে যাদের আগে কখনো ভালভাবে যাচাই করা হয়েছে। আর এসব কাজে নিজের নাগরিকদের তারা জড়িত হতে দেয় না। ’

এতে ইরানের প্রাপ্তির চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে ইরানকে বেশ মূল্য দিতে হবে। এটা করা মানে, ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক আরও অবরোধ এবং বিচ্ছিন্নতা আরোপ এবং এমনকি সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ডেকে আনা।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ইরান বিষয়ক উপদেষ্টা হিলারি ম্যান লেভারেট বলেন, ‘এখনও অনুদ্ঘাটিত রয়েছে বলে আমরা যা দেখছি তা আসলে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের প্রেক্ষিতে কোনো অর্থ বহন করে না। ’

তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো লাভ নেই, সৌদি রাষ্ট্রদূত আবদুল জুবায়েরকে হত্যা পরিকল্পনার মধ্যে ইরানের কোনো প্রাপ্তিযোগ নেই। ’

এর চেয়ে অনেক সহজ লক্ষ্যবস্তু ইরানের হাতের নাগালে

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের কোনো স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু করতে চাইলে ইরানের হাতে অনেক সুযোগ আছে। বস্তুত কুদস বাহিনী ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তো প্রক্সি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছেই। তাছাড়া, বাহরাইনের মতো কিছু অঞ্চলে তারা সৌদি স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পেছনের আঙ্গিনায় যেসব লক্ষ্যবস্তু আছে তা ইরান যথেষ্ট মনে করছে না বলেই এর কুদস বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এরকম একটি পরিকল্পনা করেছে এমন ধারণা ধোপে টেকে না।

ইরান পরিপক্কতা অর্জন করছে এবং এমন কঠিন পদক্ষেপ নিতে তারা মরিয়া হবে না

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এখন মধ্যপ্রাচ্যে অনস্বীকার্য এক শক্তি হিসেবে উদিত হয়েছে। মার্কিন নেতৃত্বে গত দশকে ইরানের প্রধান শত্রু ইরাকের সাদ্দাম হোসেন এবং আফগানিস্তানের তালেবান শাসনের পতনে পর দেশটি নতুন করে মাথা চাড়া দিয়েছে।

বর্তমানে এইসব অঞ্চলে ইরানের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক তৎপরতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন, ইরাক-আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ, তেল ও পরমাণু জ্বালানির দাম এরকম অনেক ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হিসেবে এই অঞ্চলে ইরান তার অবস্থান পাকা করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হত্যার ষড়যন্ত্রের মতো কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার ধারণা সেই দেশের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে, যে দেশ নিজের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মরিয়া। ইরানের জন্য এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

তথ্যে অনেক ফাঁক রয়েছে

হত্যা পরিকল্পনাটি  ইরান সরকার বা কুদস বাহিনীর নেতারা পরিচালনা করেছেন, এই প্রসঙ্গে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।

ইরান সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেউ এ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন কি না এই প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন কর্মকর্তারা যে বিবৃতি দিয়েছেন তা প্রশ্নবিদ্ধ।   এটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার বলেছিলেন, ‘ঠিক এই বিষয়ে আমরা সেরকম অভিযোগ করছি না। ’

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইরানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, হোল্ডার এমন কোনো অভিযোগ করেননি। ’

অপর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরান যেরকম বিচ্ছিন্ন, এটা পরিষ্কার নয় যে, ইরান সরকার এই ষড়যন্ত্রের কতোটা জানত এবং এ ব্যাপারে কতোটা সমর্থন ছিল। ’

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগকে প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছে ইরান। তারা একে যুক্তরাষ্ট্রের মিথ্যা উদ্ভাবন বলে অভিহিত করেছে। সাম্প্রতিক ওয়ালস্ট্রিট বিরোধী বিক্ষোভ থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে ওবামা প্রশাসন এই গল্প ফেঁদেছে বলে ইরানের অভিযোগ। এছাড়া, শিয়া-সুন্নি বিরোধ উস্কে দিতেই তাদের এই ফন্দি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।