নতুন এক জরিপের (Gallup poll)বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে এই খবর।
নতুন এই জরিপটি চালানো হয় ১৩৪টি দেশের মানুষের মধ্যে।
জরিপে দেখানো হয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্ববাসী আস্থা (অ্যাপ্রোভাল রেটিং) ছিল ৪৮ শতাংশ। আর কড়া মেজাজের অস্থিরচিত্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বছর শাসনামলেই তা কমতে কমতে ৩০ শতাংশে এসে ঠেকেছে।
এক দশক আগে গ্যালাপ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল লিডারশিপ জরিপের সূচনা করার পর যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপ্রোভাল রেটিং আর কখনোই এতোটা নিচে নামেনি।
জরিপে আরো বলা হয়, প্রথম বছরটি ক্ষমতায় থাকার পর ট্রাম্পের প্রতি মানুষের আস্থা যেখানটায় এসে নেমেছে, আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেলায় এমনটি কখনো ঘটেনি।
প্রথম বছর শেষে ট্রাম্পের প্রতি বিশ্ববাসীর গড়পড়তা আস্থা ৩৯ শতাংশে নেমেছে। ট্রাম্পের আগে এমনটি ঘটেছিল কেবল বিল ক্লিনটনের বেলায়। তবে ক্লিনটনের রেটিং ট্রাম্পের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি ছিল---৪৯ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের তথা এর নেতৃত্বের প্রতি আস্থার এই দ্রুত পতনের জন্য দায়ী করা হয়েছে ট্রাম্পকেই। তার পররাষ্ট্রনীতির নানারকম দোদুল্যমানতা, হঠকারি সিদ্ধান্ত, তাঁর আগ্রাসী ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত মিত্রসহ বিশ্বের অন্যসব দেশের প্রতি ভুল মনোভাব এবং সর্বোপরি তার অস্থির ব্যক্তিস্বভাব ----সব কিছু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্ববাসীকে ক্রমশ বিরূপ করে তুলছে।
এছাড়া বিশ্বমঞ্চে রাশিয়া ও চীনের নেতাদের সঙ্গে যোগ্যতায় পাল্লা দিতে মার্কিন নেতাদের ক্রমাগত অক্ষমতাও আস্থা-পতনের আরেক বড় কারণ।
গ্লোব্যাল লিডার জার্মানি
রেটিংয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকা জার্মানিকেই দেখানো হয়েছে এই মুহূর্তে ‘গ্লোব্যাল লিডার’ দেশ। তারাই এখন ইতিবাচক ‘বিশ্বনেতা’র ভূমিকাটি বাগিয়ে নিয়েছে।
জার্মানির পর চীন ও রাশিয়া
জার্মানির পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে শি জিনপিংয়ের দেশ চীন আর ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ রাশিয়া। তাদের অ্যাপ্রোভাল রেটিং যথাক্রমে ৩১ ও ২৭ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে তাদের নানাবিধ প্রভাব ও প্রতিপত্তি বাড়ার কারণেই তাদের অ্যাপ্রোভাল রেটিং এতো বেশি বেড়ে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও প্রভাব কমায় সে তার নেতৃত্বের আসনটি হারিয়েছে। আস্থাহীনতায় ক্রমাগত অতলগামী হচ্ছে সে।
যে ১৩৪টি দেশে জরিপ চালানো হয় সেগুলোর মধ্যে ৬৫টি দেশের মানুষের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থা আগের চেয়ে শতকরা ১০ ভাগ বা তারও বেশি কমে গেছে।
মিত্রদেশের মানুষও বিরূপ
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে দু:খজনক ব্যাপার হচ্ছে পশ্চিম ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও লাতিন আমেরিকায় যারা ছিল ঐতিহ্যগত মিত্র, ওয়াশিংটনের প্রতি এবার সেসব দেশের মানুষের আস্থাও কমেছে এবং কমেই চলেছে। ভবিষ্যতে আরও কমবে এমন কুলক্ষণ স্পষ্ট।
মহাখাপ্পা ব্রিটিশরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থা সবচেয়ে কমেছে ব্রিটিশদের। অথচ এক সময় এমনটা ছিল অকল্পনীয়। সেখানে এক ধাক্কায় তা ২৬ র্পাসেন্টেজ পয়েন্ট কমে গেছে। সেখানকার ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের আস্থা আর নেই বলে মত দিয়েছে। তাছাড়া নানা কারণে ব্রিটিশরা মার্কিন নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ।
অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে করে ট্রাম্পের অপরিণামদর্শী “America First” পলিসিখানি আস্থা ও জনপ্রিয়তার-আসন-প্রাপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে লাস্ট বেঞ্চের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হঠকারি পলিসি আর উল্টোপাল্টা ব্যক্তিস্বভাব ‘বিগিনিং অব দ্য এন্ড’ নামের এক রসাতল-গমনের পথই দেখাচ্ছে; যেখান থেকে ফিরে আসা বড্ড কঠিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮
জেএম