প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে তাই ঘোষণা দিয়েছেন কেন প্রচারসংখ্যা ও বিজ্ঞাপন কমতে -মতে পত্রপত্রিকা এমন দুরবস্থায় পড়েছে, অচিরেই সে কারণ খতিয়ে দেখবে তার সরকার।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমগুলো মঙ্গলবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দিয়েছে এ খবর।
প্রিন্ট মিডিয়ার এই পড়তি-দশার কারণ খুঁজে বের করার জন্য তিনি যে পর্যালোচনার ব্যবস্থা করবেন, তাতে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা হবে। স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের ‘বিশ্বস্ত’ সংবাদসূত্রগুলো কি কি সেকথাও এই পর্যালোচনার মধ্যে থাকবে।
সাংবাদিকতাকে ‘শুভবাদী শক্তি’ হিসেবে অভিহিত করে টেরিজা মে বলেন, প্রিন্ট মিডিয়াপ্রধান সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত মূলত সেটাই খতিয়ে দেখা হবে।
বিজ্ঞাপনদাতাদের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন তিনি। ডিজিট্যাল অ্যাডভার্টাইজিং সাপ্লাই চেইন কিভাবে পরিচালিত হয়, তহবিল যোগান কোথা থেকে কিভাবে আসে, পত্রিকা প্রকাশনার মূল্য কমানো বাড়ানোর ক্ষেত্রে এর কি কি ভূমিকা---এসব বিষয় নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। এ মুহূর্তে তহবিল ব্যবস্থাটা কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে টেরিজা মে’র পরিকল্পিত পর্যালোচনায় তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বিশেষভাবে।
এছাড়া ‘যেনতেনভাবে লোকের নজরকাড়ার জন্য তৈরি করা মনগড়া সংবাদ’ (‘clickbait’) বা নিম্নমানের সংবাদ দেওয়ার পথ বন্ধ করার দিকেও উদ্যোগী হবেন তিনি। উদ্যোগী হবেন এসব নিম্নমানের সংবাদ পরিবেশন করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবার সহজ পথটি বন্ধ করার ব্যাপারেও।
প্রকাশকরা সংবাদভোক্তাদের তথ্য-উপাত্ত কিভাবে ব্যবহার করে থাকেন সে বিষয়টিও কঠোর নজরদারিতে আনা হবে।
এই পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি সস্তা সংবাদপণ্যের বিপরীতে উচ্চমানের সাংবাদিকতার পক্ষে অবস্থান নেন। তার ভাষায়, আজকাল উচ্চমানের সাংবাদিকতার আকাল চলছে। যেনতেনভাবে সংবাদ প্রকাশ করাকেই লোকে ভাবছে সাংবাদিকতা। এই প্রবণতা রোধ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে-র প্রস্তাবিত এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এনইউজি মহাসচিব (NUJ general secretary) মিচেল স্ট্যানিস্ট্রিট। তিনি বলেন, ‘‘কোয়ালিটি জার্নালিজম যে সুস্থ গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা, টেরিজা মে আজ সেকথাই স্বীকার করলেন। কোয়ালিটি সাংবাদিকতা মানুষকে দুনিয়া সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল রাখে, ভুয়া সংবাদকে দূরে হটিয়ে দেয়, ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির আওতায় আনে এবং জনগণকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। ’’
তবে তার বক্তব্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হচ্ছে, যেখানে প্রিন্ট মিডিয়ার ভয়ানক অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে: "মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি আজ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত এক দশকে ৩০০-র বেশি স্থানীয় পত্রিকা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। অর্ধেকের বেশি নির্বাচনী এলাকায় একটিও মানসম্পন্ন স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা নেই। আমরা এই ভয়ানক অবস্থাটির কথা প্রতিনিয়ত বলে আসছি। আমাদের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার জনগণ অন্তত একটি ভালো পত্রিকা পাবার দাবি রাখেন। ’’
আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না এক্ষেত্রে কেউ বিনিয়োগ করছে না বলে। এ অশনি সংকেতই উঠে এলো তার কথায়। উঠে এলো আরও ভয়াবহ, আরো মন-খারাপ-করা ভবিতব্য: প্রিন্ট মিডিয়ার মরণদশা ঘনিয়ে এলো বলে!
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৮
জেএম/