ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সেদিনের কথা মনে হলে ভয়ে এখনও কেঁপে উঠি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪০ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৮
সেদিনের কথা মনে হলে ভয়ে এখনও কেঁপে উঠি ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়েছেন একজন (সংগৃহীত ছবি)

২০০৮ সালের ১২ মে। বিকেলবেলা লি ইংঝিয়া চোখ বুজে বাড়ির বারিন্দায় বসে আরাম করছিলেন। হঠাৎ মাটি খুব জোরে কেঁপে উঠলো। তিনি চোখ মেলে দেখলেন মানুষজন প্রাণভয়ে এদিক-ওদিক ছুটছেন।

১০ বছর পর সেদিনের ভয়াবহ ভূমিকম্পের বর্ণনা দিতে গিয়ে লি জানালেন, সেদিনের কথা মনে করলে এখনও ভয়ে কেঁপে উঠি। প্রথমে আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।

কারণ এর আগে এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমার ছিলো না। সেসময় আমার স্বামী এসে আমার হাত ধরেন এরপর আমরা ছুটতে শুরু করি। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।  

২০০৮ সালের এই দিনে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ওয়েনচুয়ান অঞ্চল। দুর্যোগে প্রাণ হারায় প্রায় ৯০ হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।

খোঁজ পাওয়া যায়নি আরও ১৮ হাজারের। ১৯৫০ সালের চায়ু ভূমিকম্পের পর এটিই দেশটির সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পে ধসে পড়া ঘরবাড়িলিয়ের বাড়ি ছিলো দুজিয়াংইয়ানে শহরে। শহরটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে খুব কাছে ছিলো। ভূমিকম্পের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিলো যে কিছু জায়গায় প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত ভূমি উপরে উঠে এসেছিলো। উৎপত্তিস্থল থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী বেইজিংয়ও সেদিন কেঁপে ওঠে।  

লি বলছিলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমরা পৃথিবীটা পুরো পাল্টে যায়। প্রায় ১০ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকার পর আমাকে উদ্ধার করা হয়। তবে আমি আমার দুই পা হারিয়ে ফেলি। বছরের পর বছর ধরে সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।  

​এখন কৃত্রিম পা’র সাহায্যে হাঁটাচলা করেন লি। লিয়ের মতো অনেকেই সেদিনের ক্ষতচিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন।

জীবনযুদ্ধে জয়ী লিলি জানান, দুই পা হারানোর পর স্বামী তাকে ডিভোর্স দেন। এ ঘটনার পর তিনি ভেবেছিলেন এখানেই বুঝি তার জীবন থেমে গেলো।

কিন্তু সেসময় তার পরিবার ও চীনা স্বেচ্ছাসেবকরা তাকে নতুন করে জীবন শুরু করতে সাহস জোগায়। এখন তিনি পর্যটকদের গায়ক হিসেবে কাজ করেন। চীনা সরকারের কাছ থেকে ভাতাও পান।

আর এভাবেই আমি জীবনের মোড় ঘুরিয়েছি, নতুন করে বাঁচতে শিখেছি-যোগ করেন লি।  

ভূমিকম্পের সময় অনেক স্কুলে ক্লাস চলছিলো। ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। অধিকাংশই মারা যায় স্কুলের ভবন ধসে। ইউনিসেফের তথ্যমতে, সেদিনের ভূমিকম্পে সিচুয়ান প্রদেশের প্রায় ১২ হাজার স্কুলভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেইজিং অলিম্পিকের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি হয়। এজন্য চীন সরকারকে বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়তে হয়।  

চীনা সরকার প্রতি বছর এই দিনে দুর্যোগ মোকাবিলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার আয়োজন করে। এদিন দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের কাজের প্রশংসা করা হয়। ওয়েনচুয়ান শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রতি বছর ১২ মে এই শহরে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ পালন করা হয়।  

ভূমিকম্পে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্মৃতিরক্ষায় দেশটির তোংজি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ একটি জাদুঘর ও স্মারক নির্মাণ করে। স্মারক জাদুঘর নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সরকার।

স্মৃতি জাদুঘরস্থপতি কাই ইয়ংজির নকশায় স্মারক জাদুঘরটি সবুজ প্রাঙ্গণে লাল ইস্পাতে নির্মিত। দুর্যোগ পরবর্তী দালান কাঠামোকে থিম ধরে নকশা করা হয়েছে জাদুঘরটির।  

বিরাট ভূগর্ভস্থ আনুভূমিক দালানগুলোর ছাদে কচি ঘাসের কার্পেট ছড়ানো। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ফাটলের মতো অবিকলভাবে নির্মিত ভূগর্ভস্থ চির ধরেই নামতে হয় অন্দরমহলে। দালানের কৌণিক দেয়ালগুলো তৈরি হয়েছে ওয়েদারিং স্টিল দিয়ে। আলোক ব্যবস্থাপনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভূমিকম্প পরবর্তী নিস্তব্ধতা।
 
২০১৩ সালের মে মাসে দুর্যোগের পাঁচ বছর পূর্তিতে জাদুঘরটি খুলে দেওয়া হয়। যা সাক্ষ্য দিচ্ছে সমসাময়িক চীনের ইতিহাসের স্থবির কালো অধ্যায়ের।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৮
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।