মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বোর্ড সভা শেষে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সার্গেই সিইগু বলেন, পশ্চিমাঞ্চলের সামরিক জেলা নামে পরিচিত অঞ্চলটিতে ‘অবস্থার উন্নতি’ হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে এ অঞ্চলটিতে তিনটি ব্রিগেড ও দুইটি ডিভিশনসহ ৭০টির বেশি সামরিক ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ৫ হাজার নতুন ও আধুনিক অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি সেখানকার রাশিয়ান সৈন্যদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার সৈন্যদের প্রায় ৩৫০ এর বেশিবার তদারকি করা হয়েছে। যার ফলে সেখানকার সৈন্যদের প্রশিক্ষণের গুণগত মান বেড়েছে। এছাড়াও তিনি নিশ্চিত করে বলেন, এ অঞ্চলের সৈন্যরা তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী যেকোনো কাজ করতেও প্রস্তুত।
চলতি বছরের মে মাসে র্যান্ড কর্পোরেশনের রিপোর্টে বলা হয়, পশ্চিমঞ্চলের সামরিক জেলার সদর দফতর সেন্ট পিটার্সবার্গ মস্কো ও কেলিনিনগ্রাদসহ ২৬টি ফেডারেল অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত। এর পাশেই পোলান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর সীমান্ত। এ অঞ্চলটি রাশিয়ার স্থল ও বিমান ফোর্সের জন্য সবথেকে ক্ষমতাধর।
মন্ত্রীসভার বৈঠকে সিইগু বলেন, তারা (ন্যাটো ও মিত্ররা) প্রতিনিয়ত ভূ-আঞ্চলিক প্রতিযোগী হিসেবে রাশিয়াকে আটকানোর চেষ্টা করছে।
এ সময় তিনি ন্যাটোর সঙ্গে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সম্পর্ক উন্নতির জন্য উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
দেশ দুটি মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে। চুক্তি অনুযায়ী, এ অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ও সামরিক উন্নতির জন্য দেশ দুটি’কে ন্যাটোর সঙ্গে কাজ করার পক্ষে সম্মতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এ প্রসঙ্গে সিইগু সতর্ক করে বলেন, এ ধরণের পদক্ষেপের কারণে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে আরও অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। যে কারণে আমরা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন পতন এবং স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মস্কো ও ন্যাটোর মধ্যে আবার উত্তেজনা শুরু হয়েছে। কেননা তারা একে অপরকে বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে অভিযুক্ত করে হুমকি অব্যাহত রেখেছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দ্বীপ নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার বৈরী সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় ন্যাটো তার অবস্থান আরও কঠোর করেছে।
এছাড়াও ন্যাটো ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের জন্য অভিযুক্ত করেছে রাশিয়াকে। এছাড়া পোলান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে লড়তে রাশিয়ার সামরিক শক্তি বিস্তারের অভিযোগও এনেছে ন্যাটো।
এদিকে সইগু বলেন, ২০১৪ সাল থেকে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো সৈন্য মোতায়ন বাড়িয়েছে। এ অঞ্চলে সৈন্যের সংখ্যা বাড়িয়ে ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার করেছে ন্যাটো। এছাড়াও বার্ষিক অনুশীলনের জন্য সৈন্য পাঠানোর সংখ্যাও বাড়িয়ে ২০ হাজার করেছে।
সইগু আরও বলেন, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানি ও ফ্রান্সে পাঁচটি সাইবার ওয়ারফেয়ার সেন্টার বানিয়েছে ন্যাটো।
এসময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেলজিয়ামে ন্যাটো সম্মেলনের সমালোচনাও করেন। তবে হেলসিংকিতে পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সইগু।
হেলসিংকি সম্মেলন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সহযোগিতা আরও গভীর হবে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটো ও হেলসিংকি উভয় বৈঠকে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে ‘বেশ ভালো’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি সমালোচিতও হয়েছেন। আবার ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্প ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানোরও কথা বলেন। এসময় ট্রাম্প ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশি অর্থ বিনিয়োগের কথা বলে মিত্র দেশগুলোকে সতর্কও করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার প্রভাবের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়তে এমন আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প।
তবে অন্য দেশগুলোকে আক্রমণ বা তাদের কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানায় রাশিয়া।
সিইগু রাশিয়ান আর্মির আরও অন্যান্য পরিবর্তনের কথাও জানান। তিনি বলেন, বিমান প্রতিরক্ষা বিগ্রেড, একটি সাঁজোয়া ডিভিশন, একটি রকেট ও দুটি আর্টিলারি, যৌথ আর্মি গঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হবে।
২০০৮ সালের পর থেকে রাশিয়ার সামরিক ফোর্সের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
আধুনিকীকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ ধরনের অস্ত্র ও যন্ত্রপাতির উন্নতি করা হয়েছে বলে জানান সার্গেই সিইগু। এছাড়াও তিনি বলেন, নতুন পাঁচটি অস্ত্র ও আরও কিছু যন্ত্রপাতিও যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ট্যাংক, উচ্চশক্তি সম্পন্ন রকেট লাঞ্চার টর্নেডো এস, অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফ্ট মিসাইল টর-এম২, সাঁজোয়া যান টাইফুন কে ও টাইফুন ইউ।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৮
এএইচ