প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, মালদ্বীপে সফলভাবে সম্পন্ন হওয়া তৃতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনকে আমরা স্বাগত জানাই।
ভারত মহাসাগরে প্রভাব বজায় রাখতে এ নির্বাচনের ফলাফল ভারতের পাশাপাশি চীনের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই নির্বাচনকে এশিয়ার এ দুই পরাশক্তির মধ্যকার পরোক্ষ যুদ্ধ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তবে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি বেইজিং।
২০১৩ সালে ইয়ামিনের উত্থানের আগে থেকেই চীনের সঙ্গে মালদ্বীপের সখ্য। কিন্তু তার আমলেই এই সখ্যতা দেশটির ঐতিহ্যবাহী মিত্র ভারতের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২০১৪ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মালদ্বীপ সফরে যান এবং হুলহুলে দ্বীপের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি আধুনিকায়নে একটি চীনা কোম্পানিকে চুক্তিবদ্ধ করা হয়। এছাড়াও রাজধানী মালের সঙ্গে হুলহুলেকে সংযুক্ত করতে ১.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় চীন, যা চলতি বছরের ৩০ আগস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে শি’র উচ্চাকাঙ্ক্ষী ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ পরিকল্পনার সমর্থনে বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে মালদ্বীপ।
২০১৭ সালে প্রায় তিন লাখ চীনা পর্যটক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেন যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়াও যৌথভাবে সাগর পর্যবেক্ষণকেন্দ্র স্থাপনসহ নানা বিষয়ে মালদ্বীপকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় চীন। আর এভাবেই ইয়ামিনের অধীনে চীন-মালদ্বীপের অর্থনৈতিক সম্পর্ক পোক্ত হয়ে ওঠে।
কিন্তু এবারের নির্বাচনে মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ সলিহ’র পক্ষে অবস্থান নেওয়া দলগুলো চীনের এই সহযোগিতার মধ্যে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেখছে। তাদের মতে, দেশটিকে একসময় সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে চীন। এটা একটা কৌশলগত সীমানা যা ভারত কখনোই চাইবে না যে চীন অতিক্রম করুক।
জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকে মালদ্বীপ খুবই ক্ষুদ্র একটি রাষ্ট্র। এর ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মাত্র ৪ লাখ ১৭ হাজার লোকের বসবাস। অপরদিকে হাজারেরও বেশি প্রবালদ্বীপ নিয়ে একটি বিশাল উপকূল দখল করে রেখেছে রাষ্ট্রটি যা উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত।
১৯৮৮ সালে শ্রীলংকার তামিল টাইগার নামে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী মালদ্বীপের সরকার ব্যবস্থাকে সরানোর উদ্দেশ্যে সেখানে গেলে তাদের বিরুদ্ধে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ১৬শ সেনা সহায়তা পাঠান।
১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রায় তিন যুগ ধরে মালদ্বীপ মামুন আব্দুল গাইয়ুমের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত হয়। অবশ্য গাইয়ুমের ভোগবিলাসের সৌজন্যে দেশটির পর্যটন শিল্পের খ্যাতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে তার আমলে প্রচণ্ড দুর্নীতিও ঘটতে দেখা যায়। ২০০৮ সালে দেশটির প্রথম সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে গাইয়ুমকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসেন সাবেক রাজবন্দি মোহামেদ নাসিদ।
নাসিদ দেশটিতে গণতন্ত্রের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন এবং ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করেন। কিন্তু বিভিন্ন বিতর্কের মুখে ২০১২ সালে নাসিদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ইয়ামিন ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১৫ সালে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
ইয়ামিনের আমলে ভারতকে মাঠের বাইরে রাখা হলেও শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে মালদ্বীপে নিজেদের প্রভাব ফিরিয়ে আনতে ভারত যে মুখিয়ে আছে সেটা বলে দেওয়া লাগে না। এদিকে নির্বাচনে ‘পরমবন্ধুর’ পরাজয়ে দ্বীপ রাষ্ট্রটির ওপর প্রভাব হারাতে বসা চীন এরপর কি কৌশল অবলম্বন করবে সেটাই দেখবার বিষয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
এনএইচটি/এএ