তাদের মতে, ভোস্টক-২০১৮ বা পূর্ব-২০১৮ নামে যে মহড়াটি হয়েছে রাশিয়ায়, তার মূল্য উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্রের প্রচারণা। কেননা, দেশটিতে তেলের পরই অস্ত্র খাত থেকে বেশি মুনাফা অর্জন হয়।
১১ সেপ্টেম্বর দেশটির সাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ওই মহড়াটির আয়োজন করা হয়। যাতে তিন লাখের মতো রুশ সৈন্য অংশ নেয়। সেইসঙ্গে চীনের অংশ নিয়েছিলেন তিন হাজার ২০০ সৈন্য। এতে মঙ্গোলিয়ান সেনারা অংশ নিলেও তাদের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দেশটির ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এ সামরিক মহড়াতে প্রদর্শন করা হয় ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০। আর এ থেকে অস্ত্রটির আগ্রহ বেড়েছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। সাম্প্রতিক সময়ে এ ক্ষেপণাস্ত্রটি দেশটির সব থেকে অত্যাধুনিকও।
এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রটি এস-৩০০ এর অত্যাধুনিক সংস্করণ। আগের সংস্করণটি সম্প্রতি সিরিয়াতে পাঠানো হয়েছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে।
এস-৪০০ ইতোমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে পরাশক্তির বিভিন্ন দেশে। এর সক্ষমতার কারণে এটি কিনতেও আগ্রহী অনেক দেশ। যার মধ্যে রয়েছে চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক, ভারত এবং কাতার। ক্ষেপণাস্ত্রটি কেনার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ৫ অক্টোবর চুক্তিও করে ফেলেছে ভারত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সঙ্গে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে বেশ কয়েক দেশের সরকার এ ক্ষেপণাস্ত্রটি কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তবে এসব দেশের অস্ত্রটি কেনার উদ্দেশ্য শুধু প্রযুক্তিগত দিক থেকে সর্বাধুনিকের জন্য নয়, এর মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলাও তাদের আগ্রহের অন্যতম কারণ।
সুইডেনভিত্তিক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অস্ত্র হস্তান্তর ও সামরিক ব্যয় কর্মসূচির ঊধ্বর্তন গবেষক সিমন ওয়েজম্যান বলেন, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রটি আকাশপথে বিশ্বের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি।
তিনি বলেন, এর রাডার এবং সেন্সর ব্যাপক জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এটি কমপক্ষে ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নজরদারি করতে পারে। আর সীমা ৪০০ কিলোমিটার।
এ গবেষক বলেন, এটি অনেকগুলো লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম। স্টিলথ টার্গেটও এর মধ্যে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এর অন্যতম সুবিধা হলো মডুলার সেট আপ ও গতিশীলতা। কয়েক মিনিটের মধ্যে এটি এক দিক থেকে অন্য দিকে আক্রমণ স্থানান্তর করতে পারে।
সামরিক বিশেষজ্ঞ কেভিন ব্রান্ড বলেন, এক ফুট আকার থেকে শুরু করে সব ক্ষেপণাস্ত্র প্রক্রিয়াই এটি শনাক্ত করতে পারে। এটাকে লং-রেঞ্জ, সেমি লং-রেঞ্জ, মিডিয়াম রেঞ্জ এমনকি শর্ট রেঞ্জেও পরিবর্তন করা যায়।
ন্যাটো সদস্য দেশ তুরস্ক এস-৪০০ এর অন্যতম ক্রেতা। এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক কারণে তুরস্ক এ ক্ষেপণাস্ত্রটি কিনছে।
এদিকে, ভারত, সৌদি আরব ও কাতার সামরিক প্রযুক্তিগত দিক থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্রটি কিনছে। এ দেশগুলো ন্যাটোভুক্ত নয়। তবে এ অস্ত্র কেনার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ঝুঁকি বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৮
এএইচ/টিএ