ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পাল্টাপাল্টি সমাবেশে অচল ভেনেজুয়েলার রাজপথ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
পাল্টাপাল্টি সমাবেশে অচল ভেনেজুয়েলার রাজপথ সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় হুয়ান গুয়াইদোর নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা। তবে সরকারের পক্ষে রাস্তায় নেমেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও। শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী কারাকাসের রাজপথ অচল হয়ে পড়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশে।

নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ডাকতে মাদুরোকে পশ্চিমা দেশগুলোর বেঁধে দেওয়া সময় (আলটিমেটাম) শেষ হওয়ার একদিন আগে দু’পক্ষ শনিবার রাজপথে নামে। বিক্ষোভকারীদের নেতা ও স্বঘোষিত ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট’ হুয়ান গুয়াইদো তার সমর্থকদের সমাবেশে বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবেন নেতাকর্মীরা।

আর প্রেসিডেন্ট মাদুরোও সব ধরনের দাবি ও আলটিমেটাম উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, তিনিই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট।

গত বছরের মে মাসে ভেনিজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হন মাদুরো। এ মাসের শুরুতে শপথ নেন বামপন্থি এ রাজনীতিক। তবে বিরোধীরা প্রথম থেকেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে পুনর্ভোটের দাবি জানিয়ে আসছে।

সম্প্রতি দেশটির অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা দেখা দিলে রাস্তায় নামে বিরোধীরা। এরপর জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট গুয়াইদো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্ব দিতে থাকেন। তারপর তিনি নিজেকে ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট’ বলেও ঘোষণা দিয়ে বসেন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্রদের তরফ থেকে গুয়াইদোকে ‘স্বীকৃতি’ দিয়ে মাদুরো সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে ‍গুয়াইদোকে স্বীকৃতি না দিলেও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনের মতো কয়েকটি ইউরোপীয় শক্তি নতুন করে নির্বাচন দিতে মাদুরোকে আট দিনের সময় বেঁধে দেয়। এই সময় শেষ হচ্ছে রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি)। যদিও রাশিয়া ও চীনের মতো সমাজবাদী পরাশক্তি মাদুরোর পক্ষেই তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে।

পশ্চিমা শক্তিগুলোর বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার একদিন আগে শনিবারের সমাবেশে গুয়াইদো বলেন, ‘মুক্তি’ না আসা পর্যন্ত আমাদের বিক্ষোভ চলবে। এসময় গুয়াইদোর সমর্থকেরা মাদুরোবিরোধী স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলেন।

বিরোধীদের এই বিক্ষোভ শুরুর আগে ভেনেজুয়েলার বিমান বাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং বিভাগের প্রধান জেনারেল ফ্রান্সিসকো ইয়ানেস এক ভিডিওবার্তায় গুয়াইদোর প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে অন্য সামরিক কর্মকর্তাদেরও তার পক্ষ নেওয়ার আহ্বান জানান।

যদিও এর জবাবে বিমান বাহিনীর হাইকমান্ড বলেছে, জেনারেল ইয়ানেস ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন জেনারেল ইয়ানেসের পদাঙ্ক অনুসরণ করতেই ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে মাদুরোর পূর্বসুরী সমাজবাদী নেতা প্রয়াত হুগো চাভেজের ক্ষমতার শীর্ষপদে বসার ২০ বছর বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার আয়োজিত ক্ষমতাসীন দলের সমাবেশে প্রেসিডেন্ট বলেন, পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম সরকারপক্ষের সমাবেশকে ‘অদৃশ্য’ রেখে বিরোধীদের আন্দোলনকে বড় করে দেখাতে চাইছে।

তার পক্ষেই সামরিক বাহিনী রয়েছে জানিয়ে মাদুরো বলেন, ‘আমিই গোটা ভেনেজুয়েলার সার্বভৌম প্রেসিডেন্ট। আর সামরিক বাহিনী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি আনুগত্যশীল। তাই বিরোধীদের বলবো, ক্ষমতা দখলের ব্যর্থ চেষ্টা ছেড়ে দিতে। যুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টা ছাড়ুন!’

আন্দোলনকারীরা আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চাইলেও মাদুরো বলেন, ‘আপনারা নির্বাচন চাইছেন? আগাম নির্বাচন চাইছেন? ঠিক আছে, আমরা সংসদ নির্বাচন করতে চলেছি। ভেনেজুয়েলায় কোনো স্বৈরতন্ত্র ছিল না এবং থাকবেও না। ’

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন শিগগির আহ্বান করে মাদুরো বিরোধীদের আন্দোলনকেই ভণ্ডুল করে দিতে চাইছেন। যদিও রোববার পশ্চিমা শক্তিগুলোর আলটিমেটাম শেষ হয়ে গেলে পরিস্থিতি অনেকখানিই স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।