সৌদি আরবের বাদশাহীর এই প্রথম উত্তরাধিকারী কথিত ‘সন্ত্রাস দমন’ ও ‘উগ্রবাদ ঠেকাতে’ চীনের কঠোর দমননীতির সাফাই গেয়ে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ ও ‘উগ্রবাদ প্রতিহত করতে’ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের অধিকার বেইজিংয়ের রয়েছে।
চীন সফররত বিন সালমান স্বাগতিক দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে গত শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক বৈঠকে তাদের দমননীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এমন কথা বলেছেন।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বিন সালমানের এমন ‘অবস্থান’ জানার পর সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সৌদি আরবের রাজতন্ত্রের সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে হত্যার পর পশ্চিমা বিশ্বে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিন সালমান সম্প্রতি মনোযোগ দেন পূর্বে। এরই অংশ হিসেবে তিনি প্রথমে পাকিস্তান ও পরে ভারত সফর করেন। এরপর গেছেন চীনে। সফরে গিয়ে নিপীড়িত গোষ্ঠী উইগুরের অধিকারের পক্ষে কোনো কথা না বলে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ‘ভ্যানগার্ড’ দাবিদার সৌদি আরবের প্রভাবশালী এ যুবরাজ ‘চীনা দমননীতি’র তোষণ করায় বেজায় ক্ষুব্ধ অধিকার সংগঠনগুলো। বিশেষ করে মুসলিম অধিকারের বিভিন্ন সংগঠন বিন সালমানের এই মন্তব্য ‘জঘন্য ও ন্যাক্কারজনক’ বলেও উল্লেখ করেছে।
মরুভূমি ও পাহাড়-পর্বত নিয়ে গঠিত ১৬ লাখ ৬৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের (বাংলাদেশের আয়তন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার) জিনজিয়াং চীনের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এখানে যে দুই কোটি ১৮ লাখ মানুষের বসবাস, তার মধ্যে দেড় কোটিরও বেশি উইগুর সম্প্রদায়ের। শতকরা হিসেবে যা প্রায় ৪৬ শতাংশ। ৪০ শতাংশ আছে চীনের সবচেয়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠী হান সম্প্রদায়ের মানুষ।
চীনে শাসকগোষ্ঠীর বদল হলেও দশকের পর দশক ধরে উইগুরদের ওপর চলে আসছে দমন-পীড়ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীন সরকার সাঁড়াশি অভিযান চালালে অর্ধলক্ষাধিক উইগুর মুসলিম মাতৃভূমি ছেড়ে দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়। সেখানে স্বায়ত্তশাসন চললেও এই জনগোষ্ঠীর ওপর বেইজিং ‘নজরদারির সরকার’ চালাচ্ছে বলে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম মনে করে। এমনকি ‘সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদবিরোধী’ কঠোর আইনের দোহাই দিয়ে চীন সরকার বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ উইগুরকে ‘স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে বিচ্ছিন্ন’ করে রেখেছে বলে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল তাদের প্রতিবেদনে জানায়।
জিনজিয়াংয়ে মুসলিমদের ওপর চীনের এই দমন-নীতির ব্যাপারে রিয়াদ সবসময়ই মুখে কুলুপ এঁটে থেকেছে। এমনকি সৌদি আরবের শাসক আল সৌদ রাজপরিবার দু’টি পবিত্র মসজিদের রক্ষক ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক পরিচয় দিয়ে এলেও তারা ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (আইসিসি) কোনো পরিসরেও বিষয়টি নিয়ে টুঁ শব্দ করেনি। মুখে কুলুপ এঁটে থাকার অবস্থান থেকে মুখ খুলে উল্টো এবার চীনের পক্ষ নিয়ে দমন-পীড়নে সমর্থন দেওয়ায় সৌদি যুবরাজের কঠোর সমালোচনা করেছেন ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলের মুখপাত্র মিকদাদ ভার্সি। বিষয়টিকে ‘উইগুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলার পক্ষে সাফাই’ এবং ‘অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক’ বলেও মন্তব্য করেছেন মিকদাদ।
জার্মানিভিত্তিক অধিকার সংগঠন ওয়ার্ল্ড উইগুর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উইগুরদের বন্দিশালায় নিক্ষেপের বিষয়ে বিন সালমান সোচ্চার না হতে পারার ব্যর্থতা কার্যত ‘চীনের লজ্জাকর অধিকার লঙ্ঘন’কেই নীরব সমর্থন।
অবশ্য কেবল এই উইগুর ইস্যুতেই নয়। ইয়েমেনে অনুগত শাসকগোষ্ঠীর গদি-রক্ষায় সেখানে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন বিন সালমান। বিশেষত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিদের দমনের নামে বিমান হামলা চালিয়ে শিশুসহ নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার কারণে তার নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে সৌদি আরবেই।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯
এইচএ/