শুক্রবার (১৫ মার্চ) স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ক্রাইস্টচার্চে হ্যাগলি ওভাল মাঠের খুব কাছে অবস্থিত ডিনস অ্যাভ মসজিদ, লিনউড মসজিদে এবং আরেকটি স্থানে এ হামলা হয়।
হামলার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শোকবার্তায় হামলায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হামলার ঘটনায় শোক প্রকাশ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বলেন, ভয়ঙ্কর এ হামলার ঘটনায় নিউজিল্যান্ডের জনগণের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।
অন্যদিকে, হামলায় হতাহত এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, সব ধরনের চরমপন্থা ও এ জাতীয় কর্মকাণ্ডসহ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেই ফ্রান্সের অবস্থান। মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে এক হয়ে এসব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেই কাজ করে থাকে ফ্রান্স।
আরেক বিবৃতিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেটনো মারসুদি বলেছেন, হামলার ঘটনায় হতাহত এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে দেশটির সরকার ও জনগণ।
একইসঙ্গে ক্রাইস্টচার্চে হতাহতদের মধ্যে ইন্দেনেশিয়ার কোনো নাগরিক রয়েছেন কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে মারসুদি বলেছিলেন, ক্রাইস্টচার্চের সেই মসজিদে ছয়জন ইন্দোনেশীয় নাগরিক ছিলেন। হামলার সময় তিনজন পালাতে পারলেও, অপর তিনজনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
হামলাটির নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আরেক দেশ মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন সরকার জোটের নেতৃত্বাধীন দলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম।
হামলাটিকে মানবতাবিরোধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, হামলার ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
হামলায় একজন মালয়েশিয়ান নাগরিক আহত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হামলাটিকে ‘বর্ণবাদী ও ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে টুইট বার্তায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বলেন, হামলাটির মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুতাই বোঝা যায়।
তিনি বলেন, আগেও আমরা ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আলোচনা দেখেছি এবং এতে বহু মুসলমানও বিপথগামী এবং খুনের মতো জঘন্য অপরাধের মতাদর্শের অধীনে চলে গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার টুইটার বার্তায় বলেন, ‘মসজিদে ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের পর নিউজিল্যান্ডের জনগণের প্রতি আমার উষ্ণ সমবেদনা এবং শুভকামনা। ৪৯ জন নিরীহ মানুষ এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন (ঘটনায়) মারা গেলেন, আরও অনেকে গুরুতর আহত হলেন। নিউজিল্যান্ডের পাশে থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার সাধ্যের মধ্যে সম্ভব করবে। স্রষ্টা সবার সহায় হোন। ’
আরেক টুইট বার্তায় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত ওয়াহিদুল্লাহ ওয়িইসি বলেছেন, জঘন্য এ হামলার ঘটনায় তিনজন আফগান নাগরিক আহত হয়েছেন।
এতে আফগান জাতির যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মাদ ফয়সাল টুইটে বলেছেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের জঘন্য এ হামলায় শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরায়শী।
এদিকে, মর্মান্তিক এ হামলায় নিউজিল্যান্ডে চলমান দুঃসময়ে দেশটির পাশেই রয়েছেন বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চরমপন্থীদের এ হামলায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। সেসময় হামলাটির মূল হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক, তা নিশ্চিত করেন তিনি।
দু’দেশের সম্পর্কের ব্যাপারে মরিসন বলেন, আমরা শুধু সহযোগী দেশই নই। আমরা একটি পরিবার।
হামলার ঘটনায় নিহতদের মধ্যে দুই বাংলাদেশিও রয়েছেন বলে ঢাকার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের পাশ্ববর্তী দেশ অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম সুফিউর রহমান।
আহত ৪৯ জনের মধ্যেও একাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে খবর মিলেছে। তবে হামলার ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন দেশটিতে সফররত বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।
মসজিদের কাছেই মাঠে অনুশীলন করছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। অনুশীলন শেষে তারা মসজিদটিতে জুমার নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন। খেলোয়াড়রা সেখানে গিয়ে শুনতে পান মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এরপর তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে মাঠের দিকে চলে যান। সেসময় তাদের সঙ্গে কোনো নিরাপত্তা প্রহরা ছিল না।
হামলার পর টুইটে নিজেদের নিরাপদ থাকার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম।
অন্যদিকে হামলাটিকে জঘন্য ও মর্মান্তিত হিসেবে উল্লেখ করে টুইটে ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি বলেছেন, হামলায় হতাহত এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা।
পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ব্যাপারে উদ্ধেগ প্রকাশ করে তাদের নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল মাঠে শনিবার (১৬ মার্চ ) বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় টেস্ট শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে হামলার কারণে সে ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে।
শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলার এ ঘটনায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডডার্ন প্রথমে ৪০ জনের প্রাণহানির কথা জানালেও পরে স্থানীয় পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ ৪৯ জনের প্রাণহানির কথা জানান। এদের মধ্যে ডিনস অ্যাভ মসজিদে প্রাণ হারিয়েছেন ৪১ জন। আর লিনউড মসজিদে প্রাণ হারিয়েছেন সাত জন। আহতদের নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর সেখানে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হামলার এ দিনটিকে ‘দেশের সবচেয়ে অন্ধকার দিনগুলির মধ্যে’ একটি বলে অভিহিত করেছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, নামাজ শুরুর ঠিক ১০ মিনিট পর অন্তত দুই বন্দুকধারী দু’টি মসজিদে গিয়ে সেজদারত মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এরপর জানালার কাচ ভেঙে হামলাকারী পালিয়ে যায়। উভয় মসজিদেই ৩০০ মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলাকারী দু’জন সামরিক পোশাক পরে মসজিদ দু’টিতে ঢোকে। এরপর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তাক করে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। একজন হামলাকারী তার মাথায় ক্যামেরা স্থাপন করে, তা লাইভস্ট্রিম করে। হামলার ভয়াবহতা ভিডিও গেমসের চেয়েও বর্বরোচিত মনে হয়েছে অনেকের কাছে।
হামলার ঘটনায় এক নারীসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের মৌলবাদী মানসিকতার লোক বলে জানা গেছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, গুলিতে বেশ কয়েকজন সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
হামলার পর ক্রাইস্টচার্চে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আক্রান্ত মসজিদ দু’টিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত জনসাধারণকে সেখানে প্রবেশ না করতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, হামলার পর ক্রাইস্টচার্চের সব স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
এসএ/টিএ