ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পাকিস্তানি জঙ্গিরা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৯
আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পাকিস্তানি জঙ্গিরা! প্রতীকী ছবি

ঢাকা: বালাকোটে ভারতীয় বাহিনীর বিমান হামলার পর আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই মুহাম্মদ (জেইএম) ও লস্কর-ই-তাইয়্যেবা (এলইটি)। সেখানে আফগান সশস্ত্র গোষ্ঠি আল কায়েদা ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে জঙ্গিরা। এ কারণে, কাবুল ও কান্দাহারে ভারতীয় দূতাবাসসহ সব কার্যালয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। 

রোববার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি।  

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারান ভারতীয় কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) ৪০ সদস্য।

এর জবাবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে একটি জঙ্গি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানো হয় বলে দাবি করে ভারত।  

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বালাকোটে হামলার পর জেইএম ও এলইটির জঙ্গিরা আফগানিস্তানের কুনার, নঙ্গরহার, নুরিস্তান ও কান্দাহার প্রদেশে পাড়ি জমিয়েছে। সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠি তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন দু’টি।

এ মাসের শুরুতে লস্কর-ই-তাইয়্যেবার ১৫ নেতা ও জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগ পাঁচটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় পাকিস্তান। তবে ইমরান খানের সরকারের নেওয়া ওই পদক্ষেপ লোক-দেখানো অভিযোগ করে এ বিষয়ে কঠোর ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় ভারত।

ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, এ বছর প্যারিস সম্মেলনে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) মাধ্যমে কালো তালিকাভুক্ত হওয়া এড়াতে দুই জঙ্গি গোষ্ঠির সদস্যরা ইতোমধ্যে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মধ্যবর্তী ‘দুরান্দ লাইনে’ চলে গেছে।

পাকিস্তানে সীমান্ত দিয়ে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এ বিষয়ে দেশটি ধূসর তালিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।  

ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থাগুলোর দাবি, কাবুল দূতাবাসসহ ভারতীয় কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো হাজি আব্দুল সাফির নেতৃত্বে জইশ-ই-মুহাম্মদের একটি সশস্ত্র গ্রুপের হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়াও, দূতাবাসটিতে গাড়ি বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিল আরেক সন্ত্রাসী কারী ওয়ারি গুল। পাশাপাশি, কান্দাহারে ভারতীয় কনস্যুলেটেও তালেবান হামলার আশঙ্কায় সতর্ককতা জারি করা হয়েছিল।  

হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, আফগানিস্তানের কোট ও মোমান্দারা (নঙ্গরহার); সাঙ্গুইন ও মারজা (হেলমান্দ); লোগান ও নাওয়া (গজনি); জুরমাত (পাক্তিয়া); কুনার, ফারিয়াব ও কুন্দুজ প্রদেশে বিপুল সংখ্যক জেইএম সদস্য তালেবানদের সহযোগিতায় ঘাঁটি গেড়েছে।

ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জইশ-ই-মুহাম্মদের শীর্ষনেতা মাসুদ আজহারকেও আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে ভাওয়ালপুরে থাকাকেই বেশি নিরাপদ মনে করেন।

চলতি বছর জানুয়ারিতে কাবুল যাওয়ার পথে জালালাবাদ থেকে আকবর ও আতাউল্লাহ নামে দুই জঙ্গি আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পরই দেশটিতে পাকিস্তানি জঙ্গিদের ক্রমবর্ধমান আনাগোনা নজরে আসে।

জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই জন জানান, তারা ভাওয়ালপুর ও বালাকোটের জঙ্গি ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তাদের কাবুল ও কান্দাহারে ভারতীয় স্থাপনাগুলোতে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির দাবি, লস্কর-ই-তাইয়্যেবা তাদের নবীন সদস্যদের জন্য আফগানিস্তানের নঙ্গরহার, নুরিস্তান, কুনার, হেলমান্দ ও কাবুলে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তৈরি করেছে। ইতোমধ্য নবীন সদস্যদের পেশোয়ার থেকে কাবুলে স্থানান্তর করা হয়েছে। তালেবানের সহযোগিতায় তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি পেন্টাগনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে এলইটির তিন শতাধিক সদস্য রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের জন্য বড় হুমকি। পাশপাশি, এ গ্রুপটি তালেবান ও তথাকথিত ইসলামিক এস্টেট অব খাইবার পাখতুনখাওয়ার মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।