তবে, এতকিছুর পরও নিজেদের সিদ্ধান্তেই অটল তুরস্ক। ইতোমধ্যে দেশটির পথে রওয়ানা হয়ে গেছে শক্তিশালী রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০।
সোমবার (৮ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
খবরে বলা হয়, ইতোমধ্যে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী দুইটি কার্গো প্লেন রাশিয়ার সামরিক বিমানঘাঁটি থেকে আঙ্কারার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেছে। সোমবার অথবা মঙ্গলবারের (৯ জুলাই) মধ্যেই তা তুরস্কে পৌঁছে যাবে। একইসঙ্গে, এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিস্থাপনে সোমবারই একদল রুশ বিশেষজ্ঞ তুরস্কে পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।
এস-৪০০ একটি রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র, যেটি আকাশপথের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। মার্কিন ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে ‘এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রটি বর্তমান বিশ্বের সেরা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি’ এমন কথাই বলা হয়েছে। এর অপারেশনাল রেঞ্জ ক্ষেপণাস্ত্রভেদে ৪০ থেকে ৩৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আগে এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ছিল এস-৩০০। পরে এর সংস্কার করে এস-৪০০ তৈরি করা হয়। শিগগিরই এস-৫০০ আনার কাজ চলছে বলেও জানিয়েছে রুশ সামরিক বাহিনী।
উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোটের (ন্যাটো) অন্যতম সদস্য তুরস্ককে রুশ এস-৪০০ কিনতে বরাবরই নিষেধ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিষেধাজ্ঞায় কোনো ভ্রুক্ষেপ না করায় হুঁশিয়ারিও দিয়ে আসছিল মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তুরস্ক যদি ‘এস-৪০০’ চুক্তি বাতিল না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা ‘এফ-৩৫’ চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে তাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা নিজেদের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের জন্য বড় হুমকি। এমনটি জানিয়েছিলেন তুরস্কের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইলকার বাসবাগও।
তিনি বলেন, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ এর জন্যে বড় হুমকি হতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে করা এ চুক্তি বাস্তবায়নে অনিচ্ছাকৃতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা ‘এফ-৩৫’ চুক্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিকোণ থেকেও এ ইস্যুটি তুরস্কের ভেবে দেখা উচিৎ। তাই রুশ চুক্তি বাস্তবায়নের আগে এ নিয়ে তুরস্কের ভাবা উচিৎ।
তুরস্কের এ সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো জোটভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক জটিলতা শুরু হতে পারে- বহু আগেই এমন ধারণা পোষণ করছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এত কিছুর পরও পিছু হটেনি তুরস্ক। এর মধ্যে ‘তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের দাস নয়’ এমন মন্তব্যও করেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। তিনি বলেন, রুশ ‘এস-৪০০’ কেনা চুক্তির বিতর্ক তুরস্ককে বিবেচনা করতে বাধ্য করবে ২০২০ সালে রাশিয়ার পরবর্তী সংস্করণের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এস-৫০০’ ক্ষেপণাস্ত্র কিনতেও। আর ‘এস-৫০০’ আকাশপথে আরও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হবে বলেও উল্লেখ করেন এরদোয়ান।
তবে রুশ চুক্তির আগেই তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘এফ-৩৫’ চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুসারে তাদের বড় অংকের টাকাও দিয়েছিল তুরস্ক। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০টি ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমান কেনার কথা ছিল। ইতোমধ্যে কয়েকটি যুদ্ধবিমান পাঠিয়েও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাকিগুলো পাঠাতে কিছু সময় চেয়েছিল দেশটি। এর মধ্যেই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনা নিয়ে দু’দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়।
এতো হুঁশিয়ারি-পাল্টা হুঁশিয়ারির পরও অবশেষে তুরস্কের পথে রওয়ানা হয়ে গেছে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৯
এসএ