আফগানিস্তানের সঙ্গে একটি পানিবণ্টন চুক্তির বিষয় নিষ্পত্তিতে চাপ না দিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নৌবাহিনীর সদর দপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছে। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার ফল ‘ইসলামাবাদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর’ হবে বলে সুপারিশ করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সুপারিশ গত মাসে নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। সেটি ভারতের সানডে গার্ডিয়ান পত্রিকা হাতে পায়। তাতে আফগানিস্তানের ‘নতুন রাজনৈতিক ক্ষেত্র’ সম্পর্কে স্পষ্ট করা না হলেও সানডে গার্ডিয়ানের মতে, ‘এটা বোঝা যাচ্ছে যে পরোক্ষভাবে আফগানিস্তানে তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিচ্ছে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তিচুক্তি সইয়ের পর থেকেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সও (আইএসআই) বিষয়টিতে জোর দিয়ে আসছে। ’
সুপারিশে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বিষয়টি (পানিবণ্টন চুক্তি) এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ কাবুল নদীর যে স্রোতটি মূলত চিত্রাল নদ থেকে প্রবাহিত হয়েছে, তার পানির দ্বিগুণ অংশ পাচ্ছে পাকিস্তান।
গত ৭ মার্চ দ্য সানডে গার্ডিয়ান লেখে, আইএসআইয়ের সহযোগিতায় আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে (ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত আশরাফ গনির সরকার) সরানোর জন্য মাঠে নেমেছে তালেবান। আফগানিস্তানে ভারতীয় প্রকল্পের আলোকে পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থ হাসিল করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের মার্চে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় শাখাটিকেও পুনর্গঠনের জন্য নৌবাহিনীকে অনুরোধ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর।
পর্যবেক্ষকরা এই বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখছেন। তারা পাকিস্তান সরকারের এসব নীতিগত পরিবর্তনকে ভবিষ্যতে আফগান সরকারকে সরিয়ে দিতে আইএসআই ও তালেবানের পদক্ষেপের সম্ভাব্য লক্ষণ হিসেবে মনে করছেন; যেখানে প্রতীকী ও আক্ষরিক অর্থে আফগানিস্তানের অন্যতম নিকটতম মিত্র ভারত এখন চীনের সঙ্গে বিভিন্নভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
চীনা কৌশলে পাকিস্তান
পর্যবেক্ষকদের মতে, পাকিস্তান ডুরান্ড লাইন ধরে আফগানিস্তানের ভূখণ্ড দখল করার চেষ্টা করছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের ৬০০ বর্গমিটার (একটি কবরস্থানের কিছু অংশসহ) অঞ্চল দখলে নিয়েছে। আফগানিস্তানের মুখ বন্ধ করতে ওই অঞ্চলে কাঁটাতারের বেড়াও তৈরি করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানের এমন দখলকাণ্ডে স্থানীয়দের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছিল। একটি দেশের টুকরো টুকরো ভূখণ্ড দখল করে নিজেদের বলে দাবি করার কৌশলটি চীনের। তারা দীর্ঘদিন ধরে তা করে আসছে। সানডে গার্ডিয়ান সরকারি নথি থেকে এই তথ্য জানতে পেরেছে। বর্তমানে ওই অঞ্চলগুলোকে বিতর্কিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আরো সংকটে কাবুল
আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার বিষয়ে গত সপ্তাহে একটি বিবৃতি জারি করেছেন কাবুলের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা। আফগানিস্তানের জন্য যে আরো সংকটময় সময় সামনে আসছে তা থেকেই অনুমান করা যায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইইউ প্রতিনিধিরা বিশ্বাস করেন, ২৯ মে থেকে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ইইউ’য়ের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রীদের কাউন্সিল এই ধরনের সহিংসতার মাত্রাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে ঘোষণা করছে। আফগানিস্তানের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে তালেবানের হামলা আন্ত আফগান আলোচনার সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে। এ ধরনের কাজ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিও কার্যকর করতে হবে।
আরো বলা হয়, আফগানিস্তানে নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতাও অব্যাহত রয়েছে। এই ধরনের কাজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন, যা শান্তি আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় আস্থা ও বিশ্বাসকে নষ্ট করছে।
সূত্র: সানডে গার্ডিয়ান।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২০
এমজেএফ