ওসামা বিন লাদেনের সিরিয়ান মা হলেন তাঁর কোটিপতি ইয়েমেনি বাবার বহু স্ত্রীর মধ্যে অন্যতম। তাঁর ভাইয়েরা যখন উচ্চশিক্ষার জন্য পাশ্চাত্যে যাওয়া শুরু করলেন, তখন ওসামা জেদ্দার আবদেল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়াটাকেই গুরুত্ব দিলেন।
ওসামা ১৯৮০ সালের দিকে পেশোয়ারে আসেন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য। ১৯৮৪ সালের মধ্যে ওসামা পেশোয়ারে অনেক সময় কাটান। তিনি শহরের বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস ভাড়া নিয়েছিলেন এবং আল-জিহাদ পত্রিকা অফিসে যাওয়া শুরু করেন। আল-জিহাদ পত্রিকা মূলত আরবি ভাষায় পেশোয়ার থেকে প্রকাশিত হতো। পত্রিকাটির পরামর্শদাতা ছিলেন আজম (পরবর্তী সময়ে আজম পাকিস্তানের ইসলামাবাদে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু চরমপন্থাই ছড়িয়েছে। ) ১৯৮৯ সালে জালালাবাদে মুজাহিদিনরা পরাজয় বরণ করে। তখন সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে ওসামার জিহাদ কিছুটা ধাক্কা খায়।
১৯৯১ সালের দিকে ওসামা চিন্তা করলেন, তাঁর আসল শত্রু হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর তাঁর এই টোপটি ভালোভাবেই গিলে পাকিস্তান। আফগানিস্তানের প্রশিক্ষণশিবিরে শুরু হওয়া সন্ত্রাসবাদের জন্য সিপাহ সাহাবাকে (পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল, বর্তমানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নামে পরিচিত) দায়ী করেন বিখ্যাত সাংবাদিক জ্যাসন বুরকে। তিনি দাবি করেন, বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করার জন্য একটি পরিকল্পনা করেন রামজি ইউসুফ। কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি। তবে একটা বড় উসকানি তিনিই দেন। আর তাঁর এ কাজের জন্য সব অর্থ আসত রামজির আত্মীয় খালিদ শেখ মোহাম্মদের কাছ থেকে। মোহাম্মদ তখন করাচিতে সৌদি ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে বাস করছিলেন। আর ৯/১১ হামলার পরিকল্পনা করছিলেন।
এদিকে রামজি ইউসুফ ভুট্টোর করাচির বাড়ির বাইরে আহত হয়ে পড়েন। তাঁর বোমাটি অকালে ফেটে যাওয়ায় তিনি আহত হন। গুরুতর আহত হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর হাসপাতালে তাঁকে দেখতে আসেন সিপাহ সাহাবার ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতারা। এই হামলার জন্য তখন ভুট্টো সরকার লাদেনকে দায়ী করে। এরপর আর কিছুই হয়নি।
অন্যদিকে খালিদ শেখ মোহাম্মদ নিউ ইয়র্কে হামলার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকেন। একসময় প্রকাশ্যে আসে যে, ওসামাকে অর্থায়নের জন্য নতুন পরিকল্পনা দেওয়ার আগে পুরো আরবের সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আফগানিস্তানে চলে যায়। তারা দেশটিতে অভিবাসী হিসেবে বা তীর্থযাত্রী হিসেবে যায়। আফগানিস্তানে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইন্দোনেশিয়ান হাম্বলিও। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিনদের হত্যা করার প্রজেক্টে অর্থ ঢালার জন্য প্রায়ই তিনি আয়মান আল-জাওয়াহিরির সঙ্গে দেখা করতেন। তাঁকে প্রায়ই করাচিতে দেখা যেত।
১৯৯৬ সালের দিকে কানাডা, ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে আরব প্রবাসীরা পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তান যান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল লাদেনের কাছে বায়াত গ্রহণ করা। সৌদি তরুণরা, যাদের বেশির ভাগই মূলত ইয়েমেনের বাসিন্দা; ধীরে ধীরে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি এসেছিলেন আফগানিস্তানে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র তাদের অন্য দেশের তুলনায় আরো সহজে ভিসা দিয়েছে।
ওসামার কাজে সহযোগিতা করতেন আরো এক মিসরের নাগরিক। তিনি হলেন আবু জুবায়দা। তিনি অতি শিগগিরই আল-কায়েদার মৌলিক সম্পদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ওসামা সুদানে থাকেন। এ সময় প্রশিক্ষণ দেখভাল করার জন্য তিনি পেশোয়ারে ফিরে আসেন। তার পর তাঁকে গুলি করার পর যখন আটক করা হয়, তখন পাকিস্তানের কেউ-ই জানতেন না যে বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। করাচিতে রামজি বিন আল-সিভ নামের আরো একজনকে আটক করা হয়। তিনি ছিলেন ‘হামবার্গ সেল’ নামের একটি সংগঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আসলে বিষয়গুলো ছিল চিন্তারও বাইরে। ইসলামাবাদের সরকার যদি তাঁর সম্পর্কে জানত; তবে বিষয়টি এ রকম যে, না জানার ভান করে থাকা।
২০০১ সালের ১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে হানা দেয় আল-কায়েদা। এরপর ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদ শহরে লাদেনকে হত্যা করে মার্কিনরা। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ১৩টি দল তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) গঠনে বায়তুল্লাহ মেহসুদের নেতৃত্বে এক হয়। তেহরিক-ই-তালিবানের বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। টিটিপির মূল লক্ষ্য হলো, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী অভিযান চালিয়ে দেশটির সরকারকে উৎখাত করা।
সাধারণত টিটিপি আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের উপজাতি বলয়ের ওপর নির্ভর করে। সেখানে থেকেই তারা লোকবল নিয়োগ দেয়। টিটিপি আল-কায়েদার কাছ থেকে আদর্শিক দিকনির্দেশনা পায়। আর আল-কায়েদার সঙ্গে মধুর সম্পর্কও বজায় রেখে চলে সংগঠনটি।
২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিবিসি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, পাকিস্তানের তালেবানগোষ্ঠী সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে পাঁচ সদস্যের একটি দল ঘোষণা করেছে। তাদের একজন হচ্ছেন রাজনীতিবিদ ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান।