ডাকাতির ঘটনা নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ বানানো হয়েছে। এর মধ্যে কিছু সত্যিকারের ঘটনা অবলম্বনে, আবার কিছু ঘটনা নিছকই কাল্পনিক।
এটি জাপানের ইতিহাসে সংঘটিত অন্যতম বড় ডাকাতি। এই ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত ছিলেন মাত্র একজন। ১৯৬৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাপানের টোকিও শহরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ অফিসারের ভুয়া পরিচয় নিয়ে মোটরসাইকেলে চেপে আসা এক ব্যক্তি একাই এই ডাকাতি করেন এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
১০ ডিসেম্বরের ওই সকালে নিপ্পন ট্রাস্ট ব্যাংকের কোকুবুঞ্জি শাখার চারজন কর্মচারী ব্যাংকের গাড়িতে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইয়েন নিয়ে যাচ্ছিলেন। গাড়ির ভেতর তোশিবার ফুচু কারখানার কর্মীদের বোনাসের টাকা ছিল। গাড়িটি যখন গন্তব্য থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে ছিল, তখন মোটরসাইকেলে আসা পুলিশের উর্দি পরিহিত এক যুবক সেটি থামিয়ে দেন।
ওই যুবক ব্যাংকের কর্মচারীদের বলেন, তাদের শাখার ম্যানেজারের বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে। পুলিশের কাছে সতর্কবার্তা আছে, তাদের গাড়িতেও ডিনামাইট লাগানো আছে। ব্যাংকের কর্মচারীরা ওই যুবককে পুলিশ ভেবে বিশ্বাস করেন। কারণ এর কিছুদিন আগে ব্যাংক ম্যানেজারকে হুমকি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
বোমা শনাক্ত করার কথা বলে ওই যুবক হামাগুড়ি দিয়ে গাড়ির নিচে যান এবং কর্মচারীদের গাড়ি থেকে বের করে দেন। কিছুক্ষণ পরে কর্মচারীরা গাড়ির নিচে ধোঁয়া এবং আগুনের শিখা দেখতে পান। এরপরই ওই যুবক গাড়ির নিচ থেকে বেরিয়ে আসেন এবং গাড়িতে বিস্ফোরণ হতে চলেছে বলে জানান। এ সময় ভয়ে কর্মচারীরা পিছু হটলে ওই যুবক গাড়িতে চেপে পালিয়ে যান।
কিছুটা এগিয়ে ওই যুবক ব্যাংকের গাড়িটি ছেড়ে দেন। চুরি করা টাকা অন্য একটি গাড়িতে চাপান। এরপর আরও কিছুটা এগিয়ে তিনি অন্য একটি গাড়িতে চেপে পালিয়ে যান। তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অনেক তথ্যপ্রমাণ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৯ বছর বয়সী এক যুবককে চিহ্নিত করে পুলিশ। কিন্তু তিনি পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে তার মৃত্যুর পরও লুট হওয়া টাকার কোনো সন্ধান মেলেনি।
এরপর আরও তৎপর হয় জাপানের পুলিশ। সেই সময়ের বিভিন্ন সংবাদপত্রে দাবি করা হয়, এ ঘটনার তদন্তে নেমেছিল প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার পুলিশ। সে সময় পুলিশের সন্দেহের তালিকায় নাম ওঠে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার ব্যক্তির! এখন পর্যন্ত জাপানের ইতিহাসে এটি সব থেকে বড় পুলিশি তদন্ত বলে মনে করা হয়।
এদিকে ১৯৬৯ সালে ১২ ডিসেম্বর ২৬ বছর বয়সী অপর এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাকেও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। মিথ্যে প্রমাণ জোগাড় করে তাকে গ্রেফতার করার জন্য এক পুলিশ অফিসারকে বরখাস্তও করা হয়।
এরপর ১৯৭৫ সালে পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করা যুবকের এক বন্ধুকে বিপুল পরিমাণ টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। ডাকাতির ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৮। তার কাছে এত টাকা কোথা থেকে এল তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। কিন্তু তার বিরুদ্ধেও প্রমাণ জোগাড় করতে অক্ষম হয় পুলিশ।
সাত বছর তদন্ত চালিয়ে অবশেষে হাল ছাড়ে পুলিশ। আজ পর্যন্ত অধরা অপরাধী। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জাপানে সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজ বানানো হয়েছে। তবে এ ঘটনাকে ডাকাতি বলে কখনও মেনে নেয়নি জাপান। দেশটির ফৌজদারি আইনে ডাকাতির পরিবর্তে ঘটনাটিকে সাধারণ চুরি হিসাবে গণ্য করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
এনএসআর