রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে তৃতীয় দিনের মতো যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা। রুশ বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে প্রবেশের পর সেখানে বিস্ফোরণ, গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে রুশ হামলা থেকে বাঁচতে পাশের কয়েকটি দেশে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার বাসিন্দা ইউক্রেন ছেড়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা।
পালিয়ে যাওয়া ওই বাসিন্দাদের মধ্যে ইউক্রেনে থাকা অনেক বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ইয়েমেনের ছাত্রদের একটি দল, যারা ইউক্রেনে পড়াশোনার জন্য এসেছিল। এমন কয়েকজন ছাত্র জীবন বাঁচাতে টানা দুই দিন হেঁটেছেন অন্তত ৪০ কিলোমিটার। পাশের দেশ পোল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
ওই ছাত্রদের কয়েকজনের সঙ্গে ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের মধ্যবর্তী মেডিকা সীমান্তে কথা বলেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ওই ছাত্ররা যুদ্ধের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন। তারা কীভাবে সেখান থেকে পালিয়ে এলেন, সেই বর্ণনাও দিয়েছেন।
ওই ছাত্রদের একজন আহমেদ ওমর বলেন, ‘ইউক্রেনের পরিস্থিতি শোচনীয়, কাউকে কোনো দয়া দেখানো হচ্ছে না। অনেক নারী ও শিশু যুদ্ধে নির্মমতার শিকার হচ্ছে’।
আহমেদ ওমরের বন্ধু মোহাম্মদ আবদেল-আজিজ বলেন, ‘ইউক্রেনীয় জনগণ খুবই দয়ালু। কিন্তু সব সময় দেখা যায়, নৃশংস শক্তির জয় হয়’।
পোল্যান্ডের সীমান্ত রক্ষা সংস্থা জানাচ্ছে, রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউক্রেন থেকে পালিয়ে পোল্যান্ডে যাওয়া মানুষের ঢল ক্রমশ বাড়ছে। ইতোমধ্যেই এক লাখ ইউক্রেনীয় পোল্যান্ডে ঢুকেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে যারা পালাচ্ছেন, তাদের সবাইকে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পোল্যান্ড সরকার। যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাদের অস্থায়ী বাসস্থানের আশ্বাসও তারা দিয়েছে।
ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্ত পারাপারের আটটি চৌকির সবগুলো দিয়ে শরণার্থীদের হেঁটে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কারণ সীমান্ত চৌকিগুলোতে গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। এর আগে হেঁটে আসা মানুষদের শুধু একটি চৌকি, মেডিকা দিয়ে পার হওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল।
শরণার্থীদের জন্য ৯টি অভ্যর্থনা কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে তাদের খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা এবং তথ্য দেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত পারাপার চৌকিগুলোর কাছে স্কুল এবং জিমগুলোতে এবং প্রজেমিসল রেল স্টেশনে এই অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলো খোলা হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার ডেপুটি হাইকমিশনার কেলি ক্লেমেন্টস সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
কেলি ক্লেমেন্টস বলেন, ইউক্রেনের ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি বাসিন্দা পাশের দেশে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে অভ্যর্থনা পাচ্ছে, তা অসাধারণ। কিন্তু সামনের দিনগুলোর কথা চিন্তা করে আমরা সত্যিই শঙ্কিত।
জানা গেছে, ইউক্রেনের বেশিরভাগ বাসিন্দা শরণার্থী হয়ে পাশের দেশ পোল্যান্ড, মলদোভা, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরিতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
জেএইচটি