যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জি-৭ জোটের কিছু সদস্য দেশসহ বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অর্থনৈতিক ক্ষমতাধর কিছু রাষ্ট্র রাশিয়া থেকে সোনা আমদানি নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে। শিগগিরই এ পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত জুনে বাভারিয়ায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রস্তাবটি প্রথম উত্থাপিত হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও জাপান তা যাচাই বাছাই করে দেখছে।
যুক্তরাজ্যে সোনা ও রুপার বারের বাজারের প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্য সমিতি লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন (এলবিএমএ) এক বিবৃতিতে আল–জাজিরাকে জানায়, ‘রাশিয়ার পরিশোধিত সোনার বারের গায়ে ছাপ ও তারিখ থাকে, তাই সহজেই এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব। ’
এরই মধ্যে লন্ডন মার্কেটে অনানুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ান সোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। কারণ, এলবিএমএ গত মার্চে তাদের তালিকা থেকে রাশিয়ার সোনা পরিশোধনকারীকে বাদ দিলে বেশির ভাগ ক্রেতা সোনার ব্যবসা বন্ধ করে দেন।
এ বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্য যখন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছিল, তখন বরিস জনসনের সরকার দাবি করেছিল, ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ রাশিয়ার ধনীদের কাছে সোনা রপ্তানি মূল্যবান হয়ে উঠেছে। তারা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সোনার বারের বাজারে ঝুঁকে পড়েছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব অর্থনৈতিক কারণের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক হতে পারে। কারণ, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার সোনার বাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
এ নিষেধাজ্ঞার পেছনের কারণ হলো, রাশিয়ার খনি কোম্পানি, ব্যাংক, এমনকি ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যাতে সোনা বিক্রি করে ডলার, ইউরো বা পাউন্ডের মতো হার্ড কারেন্সি আয় করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা। এসব পদক্ষেপের লক্ষ্যই হলো রাশিয়ার প্রধান আয়ের উত্স সীমিত করে যুদ্ধের সক্ষমতা দুর্বল করে দেওয়া।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনা উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া ২০২১ সালে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সোনা উৎপাদন করেছে। সোনার খনির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চীন ও অস্ট্রেলিয়া। গত বছর রাশিয়ার খনি থেকে ৩১৪ টন সোনা উত্তোলন করা হয় বলে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়। এ সোনা বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ।
সাময়িকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ক্রয় ও বাণিজ্যিক সক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে পশ্চিমারা মনে করে, তাদের (রাশিয়া) একটি লাভজনক বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া দীর্ঘমেয়াদে দেশটির অভ্যন্তরীণ শিল্পে প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাদের মনোবলেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেশির ভাগ বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ ও দাম কমে যাওয়ায় সাধারণ সোনার বাজার সম্ভবত অস্থির থাকবে।
সূত্র: আল জাজিরা
বাংলাদেশ সময়: ১১৫১ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২২
ইআর