ইউক্রেন রুশ-অধিকৃত দক্ষিণ খেরসন অঞ্চল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করায় সেখানে তীব্র চলছে বলে যুদ্ধের খবর পাওয়া গেছে। যদিও সামরিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন সেখানে বলেছেন ‘দ্রুত’ কিছু ঘটবে না।
খেরসনের পার্শ্ববর্তী মাইকোলাইভ অঞ্চলের প্রধান ভিটালি কিম বলেছেন, ‘তীব্র যুদ্ধ চলছে, আমাদের সৈন্যরা চব্বিশ ঘণ্টাটা কাজ করছে। ’
এর আগে ইউক্রেন দাবি করেছিল যে, তারা রাশিয়ার প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন ভেঙে দিয়েছে। তবে, রাশিয়ার দাবি, ব্যর্থ হামলায় ইউক্রেনের সেনারা পরাজিত হয়েছে।
মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিকে ইউক্রেন বা রাশিয়া কারোর দাবিই স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
খেরসন হচ্ছে প্রথম ইউক্রেনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ শহর যা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া আক্রমণ শুরুর পর পুতিন বাহিনী দখলে সক্ষম হয়। মার্চের শুরুতে খেরসন দখলের পর সেখানে ঘাঁটি বানিয়েই কৃষ্ণসাগরের উপকূলবর্তী ওডেসা এবং মারিউপোল শহর দখলে আক্রমণ চালিয়েছিল রাশিয়ায়। ফলে খেরসনে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ সামরিক দিক দিয়ে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।
এদিকে খেরসন অভিযানের বিষয়ে বিশদ জানাতে ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তারা দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট), ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের সামরিক অপারেশনাল কমান্ড জানিয়েছে ‘অবস্থানগত যুদ্ধ’ অব্যাহত রয়েছে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেনিপার নদীর ওপর তিনটি মূল সেতুতে আঘাত করা হয়েছে। যাতে রুশ সেনারা সেগুলো ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, ইউক্রেন অস্থায়ী রাশিয়ান পন্টুন সেতু, সেই সঙ্গে কমান্ড পোস্ট এবং গোলাবারুদ ডিপোকে লক্ষ্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত হিমারস নির্ভুল রকেট সিস্টেম ব্যবহার করছে।
সেতুগুরো ধ্বংস করা গেলে নদীর ডান (পশ্চিম) তীর থেকে রাশিয়ান সৈন্যদের পূর্ব পাড়ে আসা সম্ভব হবে না। ফলে রাশিয়ার পক্ষে পূর্বপাড়ে সৈন্য এবং অস্ত্র পুনরায় সরবরাহ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এমন অবস্থায়, কিয়েভের কর্মকর্তারা রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত বিজয়ের প্রত্যাশা না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা চলমান অভিযানকে শত্রু পক্ষকে ধীরে ধীরে দুর্বল করার প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বিবিসিকে সাক্ষাত্কার দেওয়া বেশ কয়েকজন সামরিক বিশেষজ্ঞও এর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
এদিকে হামলা শুরুর পর ইতোমধ্যে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত ইউক্রেনের ৩০ শতাংশ এলাকাও দখল করতে পারেনি রুশ সেনারা। দক্ষিণের ওডেসা থেকে পূর্বে দনবাস পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্রন্টে বেশ ভালভাবেই পুতিন বাহিনীর মোকাবিলা করছেন জেলেনস্কির অনুগত সেনারা। শুরুতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের অদূরে পৌঁছে গেলেও ইউক্রেনের সেনাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল রাশিয়ার সেনাকে। এরপর পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে (যাদের একত্রে ‘দনবাস’ বলা হয়) হামলার তীব্রতা বাড়িয়েও প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি মস্কো। অথচ হামলা শুরুর আগেই জাতিগত রুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ওই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন পুতিন। গত কয়েক বছর ধরে সেখানে মস্কোপন্থী সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলিও সক্রিয় আছে।
এমন পরিস্থিতিতে খেরসনের পাশাপাশি দক্ষিণের মাইকোলিভ এবং উত্তরের খারকিভ শহরের আশপাশ থেকেও রুশ বাহিনীকে বিতাড়িত করতে সক্রিয় হয়েছে ইউক্রেন।
এদিকে চলতি সপ্তাহে পেন্টাগন প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, যুদ্ধের প্রথম ছয় মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন। দৈনিক গড়ে মারা গেছে প্রায় ২০০ রুশ সেনা! যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম ইউক্রেনের সেনারা বেশ ভালভাবেই ব্যবহারে সক্ষম হয়েছে বলেও ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণেও বেশ চাপে আছে রাশিয়ার অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতে খেরসন হাতছাড়া হলে পুতিন বাহিনী আর কত দিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সামরিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
এমএমজেড