ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

সাক্ষাৎকার

মেয়রের ইন্টারভিউ

সেবক হয়ে থাকতে চাই আমৃত্যু

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬
সেবক হয়ে থাকতে চাই আমৃত্যু মেয়র সিরাজুল জব্বার চৌধুরী/ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গোলাপগঞ্জ (সিলেট): মার্কা নয়, ইজেম দেখে মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। বিগত বছরগুলোর উন্নয়ন বঞ্চনা আর শোষণের কবল থেকে বাঁচতেই নেতৃত্বে পরিবর্তন চেয়েছে মানুষ।

তাই শাসক নয়, সারাজীবন মানুষের সেবক হয়ে থাকতে চাই।

এমনই প্রত্যয় ব্যক্ত করছিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র সিরাজুল জব্বার চৌধুরী।

গেল বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে চার হাজার ৫৮২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী (স্বতন্ত্র) আমিনুর রহমান লিপন পান তিন হাজার ২০৮ ভোট।

নতুন মেয়র বলেন, পৌরবাসীর দুঃখ দুর্দশার কথা শুনতে আমার পয়সা লাগবে না। কিন্তু আগে দুঃখ দুর্দশার কথা বলতে গেলেও মানুষকে টাকা দিতে হতো। আমার বেলায় অন্তত এটা হবে না।

পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হওয়ার সুবাদে বছর খানেক আগে থেকেই দলের নেতাকর্মী ও এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে বৈঠক করে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অনেকটা সংসদ নির্বাচনের আমেজ ছিল। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারা গৌরবের বিষয়। তারপরও দলের কাছে মনোনয়ন চাইনি আমি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মানুষের ভালবাসা-ভাললাগার প্রতীক মোবাইল ফোন নিয়ে নির্বাচন করেছি।

আমার প্রতিশ্রুতিগুলো কম পয়সার, তবে জন গুরুত্বপূর্ণ। যেমন রাস্তাঘাট সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সমস্যা। যা জুন মাসের মধ্যেই সমাধান সম্ভব। - বলেন সিরাজুল জব্বার চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘এ’-গ্রেডের পৌরশহর গোলাপগঞ্জকে একটি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমার। তবে পৌর শহরের অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো সংস্থার সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে।

কম ভোট পাওয়া এলাকাগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেয়র হিসেবে সব এলাকার লোকজনের প্রতি সমান দৃষ্টি থাকবে আমার। কম হোক-বেশি হোক সব কেন্দ্রে ভোট তো পেয়েছি।

সংসদ সদস্যদের চেয়ে জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি বলে মনে করেন সিরাজুল জব্বার চৌধুরী।

তার মতে, সংসদ সদস্যরা মানুষের কাছাকাছি থাকেন না। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সব সময় মানুষের সঙ্গে ওঠা-বসা করতে হয়।

প্রায় ২৫ বছর ধরে পৌর সদরের এমসি একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সিরাজুল জব্বার। তার বলিষ্ট নেতৃত্বে এমসি একাডেমি শুধু পৌর এলাকা নয়, উপজেলারও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় ২২ বিঘা জমি রয়েছে। এর ছয়টি একাডেমিক ভবনের একটি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা। এক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করেন তিনি।

দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রণকেলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ও ১৫ বছর ধরে পৌরসভার রণকেলী মুহিসুন্নাহ মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সিরাজুল জব্বার। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দরিদ্রদের জন্য আলাদা ফান্ড তারই উদ্যোগে করা।

১৯৪৯ সালে পহেলা সেপ্টেম্বর গোলাপগঞ্জের মরহুম আব্দুল জব্বার ও ‍মুজিবুন নেছার ঘরে জন্ম নেন সিরাজুল জব্বার চৌধুরী। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সিরাজুল অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান।

চার সন্তানের জনক সিরাজুল জব্বারের বড় ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী, এক মেয়ে চিকিৎসক, আরেক মেয়ে অনার্স পড়ুয়া ও ছোট ছেলে স্নাতক অধ্যয়নরত।

ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করতেন সিরাজুল জব্বার। ১৯৭৫ সালে ঢাকার লালবাগের একটি বাসায় বসবাস করতেন। ওই বছরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এ খবর শুনে বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। যে মানুষটি স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুর পরোয়া করেননি, তাকে হত্যা করা হলো! সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ভক্ত তিনি। ‍ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জ্বীবিত হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।

তারই মতো আমৃত্যু মানুষের সেবা করে যেতে চান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬
এনইউ/এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।