কোরআনের কারিমের সূরা আলে ইমরানের ১৩৪ নম্বর আয়াতে পরহেজগারদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ ক্রটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।
তার মানে এ আয়াতে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার উপায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হলো- ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা। আসলে অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানব জীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে আনে। ক্রোধের পরিণতি ভালো নয়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, জীবন নৈপুণ্যের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- নেতিবাচক উত্তেজনাময় দিকগুলোকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা; যাতে সেগুলো আরেকটি নেতিবাচকতার জন্ম না দেয় বরং ইতিবাচকতার দিকে ধাবিত হয়।
‘ক্রোধ’ মানুষের আচার-আচরণের ওপর ব্যাপক উত্তেজনাকর প্রভাব ফেলে। মনের ভেতরে একটা নেতিবাচক ও অসন্তোষজনক অনুভূতির জন্ম দেয়। তারপরও এই ক্রোধকে মানুষের একটি জরুরি আচরণ বলে মনে করা হয়। কেননা এই ক্রোধকে যদি সুন্দরভাবে এবং গঠনমূলকভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে এই ক্রোধই হয়ে উঠতে পারে মানুষের সবচেয়ে ভালো প্রহরী ও রক্ষক।
আবার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে বিচিত্র সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এই ক্রোধ। সুতরাং ক্রোধ এবং উত্তেজনার উপাদানকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ যদি যথাযথ হয় তাহলে ক্রোধই তার আচার- আচরণে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এ কারণেই প্রাচীনকাল থেকে মনোবিজ্ঞানীরা ক্রোধকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য ব্যাপক চেষ্টা প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন।
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা মানুষের আচার-আচরণগত ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন ও মানুষের ক্রোধ দমনের উপায়গুলোর প্রতি বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। মানুষের মানসিক অস্থির পরিস্থিতি ও অবস্থার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো- রাগ। এই রাগ যদি একবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে তাহলে- মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে যায়।
পৃথিবীতে যত অপরাধ ঘটায় কিংবা ভয়ংকর যত সিদ্ধান্ত মানুষ তার জীবনে নেয় এই রাগ বা ক্রোধের অবস্থাতেই নেয়।
পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ১৩৪ নম্বর আয়াতে পরহেজগারদের একটি অনন্য গুণ হিসেবে ক্রোধ সংবরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ওয়াল কাজিমিনাল গাইজ। ’
এখানে ‘কিজম’ শব্দের অর্থ হলো- মশকের মুখ বন্ধ করা; যার ভেতরে পানি ভর্তি। এই শব্দটিকে এখানে রূপকার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। মারাত্মক রাগ এবং ভয়াবহ মানসিক অস্থিরতা অর্থেও শব্দটির প্রয়োগ হয়ে থাকে। তো যখন এই রাগ বা ক্রোধের আগুণ মানুষের মুখে জ্বলে ওঠে দেহ তখন স্বাভাবিক অবস্থা থেকে দূরে সরে যায়। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ তখন ঔচিত্যবোধ হারায়, স্বাভাবিক অনুভূতিও হারিয়ে বসে।
সবচেয়ে বড় বিপদ হলো- ক্রোধের সময় মানুষের বোধ এবং বুদ্ধি কোনো কাজ করে না। সুতরাং বিবেক-বুদ্ধিকে সুস্থভাবে কাজে লাগাতে হলে এই ক্রোধ থেকে বাঁচতে হবে।
জ্ঞানীরা ‘ক্রুদ্ধ হওয়া সোজা কাজ। কিন্তু যথার্থ ব্যক্তির ওপর যথাযথ পর্যায়ে ক্রুদ্ধ হওয়া, বিবেচ্য মাত্রায় ক্রুদ্ধ হওয়া এবং যথাযথ কারণে ও সঠিক সময়ে ক্রুদ্ধ হওয়া সহজ কাজ নয়। ’
তবে ক্রুদ্ধ হওয়া অসম্ভব নয়। এই রাগ সংবরণের জন্য মানুষের ঈমান, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি বাড়ানো প্রয়োজন। হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিশালী সে নয়, যে যুদ্ধে ব্যাপক বীরত্ব দেখায় বরং শক্তিশালী হলো সেই ব্যক্তি; যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ’
তার মানে রাগ করার মতো শক্তি থাকা সত্ত্বেও যে রাগকে দমন করে তার অন্তরকে আল্লাহ প্রশান্তি ও ঈমানের ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ করে দেন। আর এমন মানুষদের বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে, যারা বড় বড় গোনাহ এবং লজ্জাহীনতার কাজ থেকে বিরত থাকে এবং ক্রোধ উৎপত্তি হলে ক্ষমা করে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৪