প্রাচীনকাল থেকে কালিজিরা মানবদেহের নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ জন্যই এই জিনিসটিকে অনেকে কালিহিরা বলেন।
কালিজিরার বীজ থেকে একধরনের তেল তৈরি হয়, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে আছে ফসফেট, আয়রন এবং ফসফরাস। এ ছাড়া কালিজিরা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে। তাই বিস্ময়কর এই জিনিসটির প্রশংসা করেছেন খোদ রাসুল (সা.)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, কালিজিরায় সকল প্রকার রোগের উপশম আছে, তবে ‘আস্সাম’ ব্যতীত। আর ‘আস্সা-ম’ হলো মৃত্যু। এর ‘আল হাব্বাতুস্ সাওদা’ হলো (স্থানীয় ভাষায়) ‘শূনীয’ (অর্থাৎ কালিজিরা)। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৫৯) তাই যেকোনো রোগ নিরাময়ে, রোগ থেকে নিরাপদ থেকে অন্যান্য সতর্কতার পাশাপাশি অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে কালিজিরা সেবন করা যেতে পারে।
আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও কবিরাজি চিকিৎসায় এর ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই যারা এসব চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা করে, তাদের কাছে রোগ অনুযায়ী সঠিক ব্যবহারবিধি পাওয়া যাবে। কারণ একেক ধরনের রোগের জন্য কালিজিরার ব্যবহারবিধিও একেক রকম।
যেমন কোনো কোনো রোগের ক্ষেত্রে কালিজিরার তেল বেশ উপকারী। এ সময় ডট ইন্ডিয়া টাইমস পত্রিকার তথ্য মতে, এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধক।
এ কারণেই হয়তো সাহাবায়ে কেরাম সব সময় সঙ্গে কালিজিরা রাখার পরামর্শ দিতেন। খালিদ ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনে আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদিনায় ফিরলাম, তখনো তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশোনা করতে আসেন ইবনে আবি আতিক। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা এ কালিজিরা সঙ্গে রেখো। এর থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে জয়তুনের কয়েক ফোঁটা তেল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এদিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা আয়েশা (রা.) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে তিনি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, এই কালিজিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ওষুধ। আমি বললাম, ‘সাম’ কী? তিনি বললেন মৃত্যু। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৮৭)
বর্তমান যুগেও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কালিজিরার অনেক ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। যার কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো—
* মাথা ব্যথা সারাতে কালিজিরার তেল দারুণ উপকারী। কালিজিরার তেল কপালে মালিশ করলে এবং তিন দিন খালি পেটে ১ চা চামচ তেল খেলে আরোগ্য লাভ করা যায়।
* চুলপড়া নিরাময়েও কালিজিরার বিশেষ গুণ রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু করার পর তা ভালোভাবে শুকিয়ে পুরো মাথায় কালিজিরার তেল ভালোমতো লাগালে চুলপড়া অনেক কমে যাবে।
* হাঁপানির রোগীরা বুকে ও পিঠে কালিজিরার তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
* কালিজিরার তেল ও চূর্ণ ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
* চা বা গরম জলের সঙ্গে কালিজিরার তেল মিশিয়ে পান করলে হৃদেরাগে যেমন উপকার পাওয়া যায়, তেমনি শরীরের বাড়তি মেদও কমে। দই ও কালিজিরার মিশ্রণ প্রতিদিন এক মাস ধরে খেলে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যায় বলে
যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় জানা গেছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই মিশ্রণ শরীরের মেটাবলিজম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে মেদের পরিমাণ কমতে থাকে। সেই সঙ্গে দ্রুত হ্রাস পায় দেহের ওজন। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ৪৪ জন মেদযুক্ত মানুষের ওপর এ মিশ্রণের প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রতিদিন যদি দই ও জিরার এই মিশ্রণ খাওয়া যায়, তা হলে এক মাসের মধ্যে অন্তত ১৫ কেজি ওজন কমানো সম্ভব।
* পেটের গ্যাসের সমস্যার জন্যও কালিজিরা বেশ উপকারী। এক কাপ দুধ ও এক চা চামচ কালিজিরার তেল একসঙ্গে মিশিয়ে দৈনিক পান করলে গ্যাসের সমস্যা কমে যায়।
* যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা কোনো না কোনোভাবে কালিজিরা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গরম ভাতের সঙ্গেও কালিজিরার ভর্তা খেতে পারেন।
* জ্বর হলে সকাল-সন্ধ্যায় লেবুর রসের সঙ্গে কালিজিরার তেল খেতে পারেন। জ্বর দ্রুত সেরে যাবে।
* হাঁটুর ব্যথা সারাতে রোজ রাতে কালিজিরার তেল হাঁটুতে মালিশ করুন, হাঁটুর ব্যথা কমে যাবে। এছাড়া বাতের ব্যথা সারাতে কালিজিরার তেল নিয়মিত মালিশ করা যেতে পারে।
* ছুলি বা শ্বেতী হলে আক্রান্ত স্থানে আপেলের টুকরো দিয়ে ঘষে নিন, তারপর কালিজিরার তেল লাগান। এভাবে ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত লাগান।
* কালিজিরা নারী ও পুরুষের উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পুরুষদের জন্য খুব উপকারী। নিয়মিত কালিজিরা সেবনে পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কালিজিরার উপকারিতা নিয়ে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। তাই হাদিসের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রিকাগুলোর আলোকে কালিজিরার উপকারিতা তুলে ধরলাম। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন নতুন নতুন ভাইরাসের আবির্ভাব হচ্ছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এখনো সেগুলোর প্রতিষেধক বা কোনো ভ্যাকসিন বানানো সম্ভব হয়নি। পবিত্র হাদিসে যেহেতু রাসুল (সা.) এই জিনিসটি সব রোগের মহৌষধ বলেছেন, তাই এ ধরনের ভাইরাস থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক আমাদের খাবারের মেন্যুতে কালিজিরা যোগ করা যেতে পারে। এতে করে অন্তত রাসুল (সা.) এর সুন্নত আদায় হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
এএটি