আমরা কত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করি, কত স্বপ্ন দেখি যেন আমরা আরো অনেক দিন বেঁচে থাকব। কিন্তু আমরা ভেবে দেখি না যে এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুদীর্ঘ আশা-আকাঙ্ক্ষা আমাদের মৃত্যু থেকে গাফেল রাখে এবং আখিরাত বিমুখ করে তোলে।
আশা-আকাঙ্ক্ষা ওদের ভুলিয়ে রাখুক। অতঃপর শিগগিরই ওরা জানতে পারবে। ’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৩)
আবদুর রহমান সাদি (রহ.) বলেন, এই আয়াতে দুনিয়াদারদের ধমক দেওয়া হয়েছে। কেননা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা ও দীর্ঘ আশার কারণে মানুষ আখিরাত থেকে বিমুখ হয়ে পড়ে। (তাফসিরে সাদি, পৃষ্ঠা ৪২৯)
হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘বান্দা যখন দীর্ঘ আশা করে তখন তার আমল খারাপ হয়ে যায়। ’(তাফসিরে আজওয়াউল বায়ান : ২/২৫৩)
এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-কে উপদেশ দিয়ে বলেন, তুমি দুনিয়াতে একজন অপরিচিত ব্যক্তি অথবা পথিকের মতো হয়ে থাকো। এর পর থেকে ইবনু ওমর (রা.) বলতেন, সন্ধ্যা হলে তুমি সকালের আশা কোরো না এবং সকাল হলে তুমি সন্ধ্যার আশা কোরো না। অসুস্থ হওয়ার আগে তুমি তোমার সুস্থতাকে এবং মৃত্যু আসার আগে তুমি তোমার জীবনকে কাজে লাগাও। (বুখারি, হাদিস : ৬৪১৬)
অথচ আমরা অহর্নিশ ছুটে চলেছি আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। মৃত্যু সম্পর্কে আমরা একেবারেই উদাসীন। সালমান ফারসি (রা.) বলেন, তিন শ্রেণির লোককে দেখলে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই—
(১) সেই ব্যক্তি, যে দীর্ঘ আশা-আকাঙ্ক্ষা করে, কিন্তু মৃত্যু নিয়ে মোটেও চিন্তা করে না। অথচ মৃত্যু তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
(২) মৃত্যু থেকে গাফেল ব্যক্তি, অথচ তার মৃত্যুর পরই কিয়ামত শুরু হয়ে যাবে।
(৩) সেই ব্যক্তি, যে গালভরে হাসে, কিন্তু সে জানে না যে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট নাকি রাগান্বিত। (গাজালি, ইহয়াউ উলুমিদ্দিন ৪/৪৫৪)
পার্থিব আশার চোরাবালিতে ডুবে গেছে আমাদের জীবন। ফলে ইবাদতগুলো হয়ে গেছে প্রাণহীন, সেখানে আর অল্পে তুষ্টির আবাদ হয় না। অথচ বল্গাহীন আকাঙ্ক্ষার লাগাম টেনে ধরে আমরা আমাদের আমল সুন্দর করতে পারতাম এবং অল্পে তুষ্ট থেকে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করতে পারতাম।
আবুল লায়েস সামারকান্দি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষা কম করে, মহান আল্লাহ তাকে চারভাবে সম্মানিত করেন, (১) তাকে আল্লাহর অনুগত্যে অবিচলতা দান করেন। (২) তার পার্থিব দুশ্চিন্তা হ্রাস করে দেন। (৩) স্বল্প উপার্জনের ওপর সন্তুষ্ট থাকার তাওফিক দান করেন এবং তার অন্তর আলোকিত করে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
এমজে