মহান আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করার এবং পাপ পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামের নির্দেশ হলো ব্যক্তি নিজে পাপ করবে না, সক্ষমতা থাকলে অন্যকেও তা করতে দেবে না এবং পাপের প্রসার ঘটাবে না।
পাপ প্রসারে যাদের দায় বেশি
সমাজে অন্যায় ও অপরাদের বিস্তারে নেতৃস্থানীয় মানুষই বেশি দায়ি। কেননা মানুষ তাদের ভয় পায় এবং তারা কোনো অন্যায় করলে সেটা সমাজে বৈধতা লাভ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন কোনো জনপদ ধ্বংস করতে চাই তখন তার সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিদেরকে সত্কাজ করার আদেশ দেই, কিন্তু তারা সেখানে অসত্কাজ করে। অতঃপর তার জন্য শাস্তি ন্যায়সংগত হয়ে যায় এবং আমি তা সম্পূর্ণ ধ্বংস করি। ’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ১৬)
পাপ প্রসারের শাস্তি
কোরআন ও হাদিসের আলোকে সমাজে পাপ প্রসারের শাস্তিগুলো তুলে ধরা হলো—
১. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি : সমাজে যখন পাপের প্রসার ঘটে তখন বিপর্যয় দেখা দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যার ফলে তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। ’ (সুরা রোম, আয়াত : ৪১)
২. দুনিয়া ও আখেরাতে ভয়াবহ শাস্তি : যারা পাপ কাজ করে এবং পারে প্রসার ঘটায় পরকালে তারা ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখেরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ১৯)
৩. পতন তরান্বিত হয় : পাপের প্রসার সমাজ ও জাতির পতন তরান্বিত করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের অপরাধের জন্য তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছিল এবং পরে তাদেরকে দাখিল করা হয়েছিল আগুনে, অতঃপর তারা কাউকে আল্লাহর মোকাবেলায় পায়নি সাহায্যকারী। ’ (সুরা নুহ, আয়াত : ২৫)
৪. সামগ্রিক শাস্তি দান : যখন কোনো সমাজের সর্বস্তরে পাপ বিস্তার করে, তখন আল্লাহ তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করেন। যেমনটি নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে ঘটেছিল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন আমার আদেশ এলো, তখন আমি জনপদকে উল্টিয়ে দিলাম এবং তাদের ওপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম প্রস্তর কংকর। যা তোমার প্রতিপালকের কাছে চিহ্নিত ছিল। এটা জালিমদের থেকে দূরে নয়। ’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৮২-৮৩)
৫. নেককার ব্যক্তিও ধ্বংস হয় : যখন কোনো সমাজে পাপের প্রসার ঘটে, তখন নেককার মানুষও আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পায় না। জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.) বলেন, একবার নবী (সা.) রক্তবর্ণ চেহারা নিয়ে ঘুম থেকে জাগলেন এবং বলতে লাগলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ! (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই) নিকটবর্তী এক দুর্যোগে আরবরা ধ্বংস হয়ে যাবে। ...জিজ্ঞাসা করা হলো, আমরা কি ধ্বংস হয়ে যাবো অথচ আমাদের মাঝে নেককার লোকও থাকবে? নবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপাচার বেড়ে যাবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৫৯)
নেককাজ নিয়ে বিদ্রূপ করাও পাপ প্রসারের শামিল
কারো নেককাজ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করাও পাপ প্রসারের শামিল। পবিত্র কোরআনে লুত (আ.)-এর সম্প্রদায়ের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘উত্তরে তার সম্প্রদায়ে শুধু বলল, লুত পরিবারকে তোমরা জনপদ থেকে বের করে দাও, তারা তো এমন লোক যারা পবিত্র সাজতে চায়। ’ (সুরা নামল, আয়াত : ৫৬)
গোপন পাপও শাস্তির কারণ
কেউ গোপনে কোনো পাপ করলে বা পাপের প্রসার ঘটালেও আল্লাহর শাস্তি অবধারিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বোলো, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ, অসংগত বিরোধিতা এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর শরিক করা—যার কোনো সনদ তিনি প্রেরণ করেননি এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলা যা তোমরা জানো না। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩৩)
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজ রক্ষা পায়
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পাপের প্রসার রোধ করত সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে সীমা লঙ্ঘন করে, তাদের দৃষ্টান্ত সেই যাত্রীদলের মতো, যারা লটারির মাধ্যমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। তাদের কেউ স্থান পেল ওপর তলায় আর কেউ নীচ তলায়। (পানির ব্যবস্থা ছিল ওপর তলায়) কাজেই নীচের তলার লোকেরা পানি সংগ্রহের জন্য ওপর তলার লোকদের ডিঙ্গিয়ে যেত। তখন নীচ তলার লোকেরা বলল, ওপর তলার লোকদের কষ্ট না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের অংশে একটি ছিদ্র করে নেই (তবে ভাল হয়)। এমতাবস্থায় তারা যদি এদেরকে আপন মর্জির ওপর ছেড়ে দেয় তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা এদের হাত ধরে রাখে (বিরত রাখে) তবে তারা এবং সকলেই রক্ষা পাবে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৯৩)
আল্লাহ সবাইকে সমাজের পাপরোধে ভূমিকা রাখার তাওফিক দিন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২৪
এসআই