পারিবারিক সূত্রে গাঁথা সম্পর্ককে আত্মীয়তা বলা হয়। তবে সাধারণত রক্ত, বংশ কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের সূত্র ধরেই আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, যদি তোমরা ক্ষমতা পাও, তাহলে কি পৃথিবীতে তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন। (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২-২৩)
আত্মীয়-স্বজনের হক বা অধিকার সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দান করে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদেরও।
আর কিছুতেই অপব্যয় করো না। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৬)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি প্রিয় নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি রিজিকের প্রশস্ততা ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৫৫৫৯, ৫৫২৭)
হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের অধিকার সঠিকভাবে আদায় করা এমন একটি বিশেষ ভালো গুণ ও আল্লাহর আদেশ পালন, যার বাস্তবায়ন দেখে খুশি হয়ে আল্লাহ তায়ালা রিজিকে সচ্ছলতা ও আয়ুতে বরকত দান করেন।
বস্তুত জীবনের সীমা দীর্ঘায়ত হোক চায় না—এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রত্যেকেই চায় জীবনের আয়ু বৃদ্ধি হোক। বয়সের পরিসীমা আরো পরিব্যপ্ত হোক। পৃথিবীতে সে আরো বেশিদিন টিকে থাকুক।
স্বভাবতই মানুষ আয়ু বৃদ্ধিতে যত চেষ্টা-প্রচেষ্টা করুক, জীবন একদিন ফুরিয়ে আসে। কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সা.) সংক্ষিপ্ত জীবনকেও কীভাবে বরকতপূর্ণ করা যায়, তার দিক-বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহর কথা সত্য, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কথা সত্য। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে আল্লাহ জীবন ও আয়ুতে নিশ্চয় বরকত দান করবেন। স্বল্প সময়েও বহু কাজ করার তাওফিক দেবেন।
প্রসঙ্গত, অনেককে দেখা যায়, সাধারণ বিষয় নিয়েও ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কথাবার্তা বন্ধ রাখে। এমনকি কেউ কেউ তো ক্রোধের আতিশয্যে সারাজীবন দেখা-সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ রাখে। অথচ এ ব্যাপারে (সা.) স্পষ্টভাবে ইরশাদ করেছেন।
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য তিন দিনের বেশি তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বন্ধ রাখা জায়েয নেই। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ৬২৯৫)।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে একটি হাদিসে বর্ণিত ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, আমার কিছু আত্মীয় এমন আছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক যতই বজিয়ে রাখার চেষ্টা করি, ততই তারা ছিন্ন করে। যতই সৎ বা ভালো ব্যবহার করি, তারা ততই দুর্ব্যবহার করে। সহনশীলতা অবলম্বন করলেও তারা বুঝতে চায় না। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আর তুমি তাদের সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করে চলছ, তা যদি অব্যাহত রাখতে পার তাহলে আল্লাহ সর্বদা তোমার সাহায্যকারী থাকবেন। ’ (মুসলিম)
আবু আইয়ুব আনসারি রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তখন রাসূল বললেন, ‘আল্লাহর এবাদত কর, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করো না। নামাজ ভালো করে আদায় কর এবং যাকাত দাও। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখো। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ১৩০৯)
ফজিলত, সুসংবাদ ও সতর্কবাণীর হাদিস শোনে আমাদের বোধোদয় হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই আসুন, আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের প্রতি যত্নবান হই। পারস্পরিক বন্ধনকে আরো আন্তরিক ও অটুট করে তুলি।
এসআরএস