পবিত্র কাবা শরীফ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও প্রেরণার উৎস। পবিত্র হজ এবং উমরা উপলক্ষে প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তওয়াফ করেন।
ইতোমধ্যে কাবাঘরের চারদিকে নির্মাণ করা হয়েছে মাতাফ (তওয়াফ) ব্রিজ। এরফলে চলাচলে অক্ষম ও প্রবীণদের জন্য পবিত্র কাবা শরীফ তওয়াফ করা এখন আরও সহজ হয়েছে। তারা হুড়োহুড়ি ছাড়া তওয়াফ করতে পারছেন। এই সুযোগে অগণিত মানুষ প্রতি মুহূর্ত কাবাঘর তওয়াফ করছেন। অথচ কিছুদিন আগ পর্যন্ত প্রচণ্ড ভীড়ের দরুণ চলাচলে অক্ষম ও প্রবীণদের তওয়াফ ছিল প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। বিদ্যমান অবস্থায় এসব মানুষের জন্য চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব সরকার।
বাদশাহ আবদুল্লাহর নির্দেশে এই ব্রিজ তৈরি করা হয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র দুই মসজিদবিষয়ক প্রেসিডেন্ট শেখ আবদুর রহমান আল সাউদ জানান, এই মাতাফ ব্রিজের প্রস্থ ১২ মিটার ও উচ্চতা ১৩ মিটার। এক ঘণ্টায় এ ব্রিজের ওপর দিয়ে ১৭০০ হুইল চেয়ার চলাচল করানো যাবে।
হারাম শরীফ সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে দুই পবিত্র মসজিদবিষয়ক প্রেসিডেন্সির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আল খোজাইম বলেন, ‘কিং আবদুল্লাহ এক্সপানসন’ নামের ওই প্রকল্পটি সম্পন্ন করার জন্য সর্বাধুনিক যান্ত্রিক এবং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে অতিরিক্ত আরো ১২ লাখের মতো হজযাত্রীর সুবিধা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও নতুন সম্প্রসারিত অংশে আধুনিক বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণসহ সব ধরনের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
মসজিদের উত্তরদিকের চত্বরে ছাউনি নির্মাণ করা হবে। সম্প্রসারিত অংশটি মূল মসজিদ এবং সায়ী (দৌঁড়ানোর স্থান) করার জায়গায় ওভারব্রিজের সাহায্যে সংযুক্ত করা হবে। নতুন সম্প্রসারিত অংশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং বৈদ্যুতিক সিঁড়ি সংযোজন করা হবে। ইতোমধ্যেই কাবা শরীফ তওয়াফের জায়গা সম্প্রসারণ এবং মসজিদের সব অংশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয়েছে।
বাদশাহ আবদুল্লাহর নির্দেশে সম্পাদিত বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে আল খোজাইম বলেন, সাফা মারওয়ার মাঝে দৌঁড়ানোর জায়গা সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন হলে সেখানে প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ ১৮ হাজার হাজী সায়ী করতে পারবেন। আগে যেখানে ঘণ্টায় মাত্র ৪৪ হাজার হাজী সায়ী করতে পারতেন। বাদশাহ আবদুল আজিজ ইন্ডোমেন্ট টাওয়ারকে মক্কার সবচেয়ে বৃহৎ রিয়েল এস্টেট প্রকল্প হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। এতে ৬টি আবাসিক ভবন এবং একটি ৫ তারকা হোটেল সন্নিবেশিত থাকবে। সামনের ভবনটি হবে ২৮ তলা বিশিষ্ট এবং পেছনেরটি হবে ৩৫তলা বিশিষ্ট। আর পাশের ভবনটি হবে ৪৫ তলা বিশিষ্ট। এছাড়া হোটেল ভবনটি হবে ৬০তলা বিশিষ্ট। সমগ্র কমপ্লেক্সে মোট ১১ হাজার কক্ষ ও স্যুট থাকবে। যেখানে ৩৫ হাজার হজযাত্রীর সঙ্কুলান হবে। হাজীদের কল্যাণে বাদশাহর নেওয়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন আল খোজাইম। যেগুলো আগেই সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মিনা, আরাফাত এবং মুজদালিফার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী রেলওয়ে প্রকল্প, পবিত্র মক্কা ও মদিনার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী হারামাইন রেলওয়ে প্রকল্প, জামারাত (কঙ্কও নিক্ষেপ) ব্রিজ প্রকল্প, সেন্ট্রাল জোন ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, বাদশাহ আবদুল আজিজ রোড, নতুন সংযোগ সড়ক এবং এর সাথে পবিত্র নগরীর বন্যার পানি নিষ্কাশন প্রকল্প। শুধুমাত্র জামারাত ব্রিজ প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে ব্যয় হয় ৪৫০ কোটি সৌদি রিয়াল। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় প্রচ- ভিড় এড়াতে এই ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ৫০ লাখ হাজীর ধারণক্ষমতাসম্পন্ন করে এই ব্রিজের নকশা প্রস্তুত করা হয়।
-আরব নিউজ অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময় : ১১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫