ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

কল্যাণময় জীবনের সন্ধানে

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫
কল্যাণময় জীবনের সন্ধানে

মানুষ হিসেবে আমরা খুব বিচিত্র স্বভাবের। যে স্বভাবের কারণে মানুষ তার জীবনে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো ভুল, পাপ ও গোনাহগুলোকে কম গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

মনে মনে ভাবে এ আর এমন কী? অথচ ছোট ছোট ভুলগুলোই কিন্তু ধীরে ধীরে একত্রিত হয়ে তা পাপের স্তুপে পরিণত হয়! আমরা যে পাপগুলোকে আলাদাভাবে ছোট কিংবা তুচ্ছ মনে করছি, সেগুলোকে একত্রিত করে হিসাব করলে দেখা যাবে যে, পাপের এক বিশাল পাহাড় গড়ে উঠেছে।

বস্তুত অধিকাংশ মানুষ দুনিয়ার আনন্দ ও ভোগসামগ্রীকে ভালোবাসে। এটা যে খুব দোষের তা কিন্তু নয়, তবে যখন চাওয়াটা সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই দেখা দেয় বিপত্তি। যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ইসলাম। ইসলাম মনে করে, কোনো ব্যক্তি যদি লাগামহীন মাত্রায় ভোগ বিলাসে মত্ত হয় তাহলে সে ব্যক্তি তার আধ্যাত্মিক ও শারীরীক স্বাস্থ্য ধবংসের পাশাপাশি অন্যদের অধিকার স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুন্ন করে থাকে। আর এভাবে সে একজন গোনাহগারে পরিণত হয়। গোনাহ মানুষের লোভ এবং ব্যক্তিগত আনন্দ উপভোগ সম্পর্কে ভুল ধারণার ফসল। অতীতে অনেক জাতি তাদের নিজ অপকর্ম ও পাপের কারণে ধ্বংস হয়েছে। পবিত্র কোরআনে কারিমে এ সম্পর্কে অনেক দৃষ্টান্তও রয়েছে। তাই এ বিষয়ে মানুষের সতর্ক পদক্ষেপ কাম্য।

আলেমরা বলেন, পাপ মানুষের অন্তর্দৃষ্টি ও বিবেককে হত্যা করে এবং মানুষের হৃদয়কে করে কালিমালিপ্ত। ফলে মানুষের আত্মা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে একজন মানুষ আল্লাহ সম্পর্কে যত বেশি সচেতন হয়, ততই তিনি পাপ থেকে দূরে থাকেন। একমাত্র আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাসই পারে মানুষকে পাপের প্রলোভন, পথ ও ছলনা থেকে রক্ষা করতে। ইমানদার মানুষের কাছে পাপের বিপদটা কেমন মনে হয়, তা বোঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইমানদার ব্যক্তি পাপকে মাথার ওপর ঝুলন্ত এমন এক পাহাড়ের মতো মনে করেন- যা যে কোনো সময় তার ওপর পতিত হতে পারে।

পরম করুণাময় আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি সর্বদা বান্দাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনার পথ প্রসারিত করে রেখেছেন। সত্যিকারের তওবার অর্থ হলো পুনরায় ওই ভুল আর না করা। আল্লাহতায়ালা প্রকৃত তওবাকারী অনুতপ্ত বান্দাকে খুব ভালোবাসেন। বাবা মা তাদের সন্তানকে যেমন ভালোবাসেন পরম করুণাময় আল্লাহ তার সৃষ্টিকে তার চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশি ভালোবাসেন। এমনকি বান্দা যদি তার অবাধ্য হন তাহলেও আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। আর এ কারণেই পবিত্র ধর্ম ইসলাম তার বাস্তববাদী নীতির আলোকে সব মানুষকে বিশ্বাসী হওয়ার আহবান জানায়। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইমানদার হোন এবং সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করুন। কখনও পাপ করলে সঙ্গে সঙ্গে অনুতপ্ত হোন এবং আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

আমরা জানি, ধার্মিকতা কিংবা ধর্মচর্চা মানুষকে সব ধরনের খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। ধার্মিক ব্যক্তি মনে করেন আল্লাহ যে শুধু তার আচার-আচরণ ও কাজকর্ম দেখছেন তা নয়, তিনি গোটা বিশ্ব জগতের সব কিছুই দেখছেন। ফলে ইমানদার ব্যক্তির হৃদয়ে বিবেক সদা জাগ্রত থাকে ও তার অর্ন্তদৃষ্টির বিকাশ ঘটতে থাকে। তাই ইমানদার ব্যক্তি নিজ আচরণের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকেন। অন্য কেউ যেন তার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও আঘাতপ্রাপ্ত না হন সেদিকে তিনি গভীরভাবে খেয়াল রাখেন। আর এভাবেই ধার্মিকতা মানুষের হৃদয়ে পবিত্রতা ও ন্যায় বিচারের চেতনাকে জোরদার করে। ধার্মিকতার এই সুন্দর চেতনাগুলোই কিন্তু ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত ও কল্যানময় জীবনের মূলমন্ত্র।

বলা হয়েছে, মানুষ যদি ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে মাটিতে প্রোথিত খুঁটির মতো নামাজে দাঁড়িয়ে থাকে অথবা রোজা রাখতে রাখতে শীর্ণকায় হয়ে যায়- তাহলেও ধার্মিক না হওয়া পর্যন্ত এবং পাপকাজ থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত তার ইবাদত কবুল হয় না। তাই এটা স্পষ্ট যে, ইসলাম ইবাদতের লক্ষ্যেই মানুষকে সুশিক্ষিত করে এবং সুস্থ সমাজ গড়ে তোলে। আর মানুষের আত্মাকে বিশুদ্ধ করার জন্যেই বিনম্র ও একাগ্র ইবাদত বেশি জরুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘন্টা, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।