বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে তারাপুর ও মালশন এই দুই গ্রামে প্রাচীন ছোট ২টি মসজিদ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শত বছরের এই মসজিদগুলোতে এখন আর কেউ নামাজ পডে না।
তারাপুর গ্রামের মসজিদে একসাথে ৩ জন এবং মালশন গ্রামের মসজিদে মাত্র ৫ জনের নামাজ পড়ার মতো জায়গা ছিল। ঐতিহাসিক নিদর্শনের গ্রাম তারাপুর ও মালশনের অবস্থান বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর এলাকায়। ব্রডগেজ রেললাইন পার হয়ে তারাপুর গ্রামে ঢুকতে প্রথমে পড়ে তালুকদার বাড়ি। এই তালুকদার বাড়ি পেছনে ফেলে বেশ কয়েকটা বাড়ি পেরিয়ে গেলে মিলবে ক্ষুদ্র মসজিদের দু’টির একটি। তারাপুর গ্রামের মসজিদের উচ্চতা ১৫ ফুট আর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ৮ ফুট।
মসজিদে প্রবেশ দরজার উচ্চতা ৪ ফুট আর চওড়া দেড় ফুট। একজন মানুষ সেখানে কোনো রকমে প্রবেশ করতে পারবে। মসজিদের ভিতরে একসাথে মাত্র ৩ জন নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদে সামান্য উঁচু একটি গম্বুজ আছে। গম্বুজের ওপরে ছিল মিনার- যা অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। আর ইটের তৈরি দেয়াল পুরু দেড় ফুট। যে ইটগুলো মসজিদের দেয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর আকার খুব ছোট। মসজিদের দরজায় দু’টি সুন্দর খিলান আছে। দরজার খিলান এবং ভিতরের মিম্বর ও মেহরাবই বলে দেয় যে স্থাপনাটি মসজিদ। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি স্থাপনাটি এতোটাই পুরনো যে প্রথমে দেখে মসজিদ হিসাবে বোঝা কঠিন।
এই মসজিদের ঐতিহাসিক ভিত্তি সম্পর্কে বলা হয়, সান্তাহার শহরের পাশে ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন সদরে ছিল নাটোরের রাজা রামাকান্তের স্ত্রী রাণী ভবানীর বাবার বাড়ি। আর সান্তাহারসহ আশপাশের অঞ্চল তথা তারাপুরও ছিল রাণী ভবানীর স্বামীর এবং পরে রাণী ভবানীর রাজ্যত্বের অংশ। সে কারণে রাণী ভবানীর আসা-যাওয়া ছিল এই গ্রামে।
কথিত আছে, তারাবানু নামে একজন পরহেজগারী মুসলমান মহিলার বাসস্থান ছিল এই গ্রামে। কিন্তু হিন্দু প্রধান এলাকা হওয়ার কারণে ওই মহিলার নামাজ পড়াসহ ইবাদত-বন্দেগিতে অনেক অসুবিধা হতো। এক পর্যায়ে রাণী ভবানী এমন কথা জানতে পারেন এবং তিনি নিজেই চলে আসেন এই গ্রামে। আর সেই মহিলার নামাজ পড়াসহ ইবাদত-বন্দেগিতে যেন কেউ কোনো অসুবিধা না করতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর রাখার জন্য পেয়াদাদের হুকুম দেন এবং তার জন্য একটি মসজিদ তৈরি করে দেয়ারও নির্দেশ দেন। এভাবেই এই মসজিদটির গোড়াপত্তন ঘটে।
তারাপুর গ্রামে অবস্থিত মসজিদের মতো অপর মসজিদটি রয়েছে মালশন গ্রামে। তবে মালশন গ্রামের মসজিদটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় তারাপুর মসজিদের চেয়ে একটু বড়। কিন্তু নির্মাণশৈলী একই ধরনের। এ মসজিদটি সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য কেউ জানে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘন্টা, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫