আগামীকাল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী সমাজের মানমর্যাদা প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের বিষয়টি সব দেশের সর্বস্তরের মানুষকে জানিয়ে দিতে, সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতিবছর ৮ মার্চ এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
এ চিত্র শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সর্বত্র দৃশ্যমান। বিদ্যমান অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে সত্য, কিন্তু তা কাক্সিক্ষত মাত্রার অনেক নিচে অবস্থান করছে। শুধু তাই নয়, নারী নির্যাতন ও বঞ্চনাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব হয়নি। দেশের নারী সমাজ এখনও নানা ধরনের পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে এবং এর শিকার হয়ে আত্মহননও করেছেন অনেকে। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় প্রতিবাদকারীকেও হত্যা করা হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে। বস্ত্রশিল্পে নারী শ্রমিকের বঞ্চনা আলোচিত ঘটনা। এ শিল্পের প্রসার ঘটেছে মূলত নারী শ্রমিকের কল্যাণেই, অথচ তারা বর্ণনাতীত মানবেতর জীবনযাপন করে থাকেন। যৌতুক প্রথা, বাল্যবিবাহ, বিভিন্ন কুসংস্কার, পারিবারিক জীবনে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের আধিপত্য, প্রথা, মান্ধাতার আমলের মনোকাঠামো ইত্যাদি নারী অগ্রগতির পথে বড় বাধা। এসব অতিক্রম করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে দেশে। আমরা আশা করি এ সূচক দ্রুত অগ্রগতির মুখ দেখবে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আধুনিক শিক্ষার প্রসার হতে পারে কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আশা করি বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন।
নারী সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা (পুরুষরা) তাদের (নারীদের) ভূষণ, তারাও তোমাদের ভূষণ। আল্লাহতায়ালা কি চমৎকার উপমাই না তুলে ধরেছেন; যা ভাবলে অবাক ও বিস্মিত হতে হয়। আমরা জানি, পোশাক ছাড়া যেমন নারী কিংবা পুরুষ কেউ উলঙ্গ হয়ে চলতে পারে না। অবশ্যই তার পোশাক চাই। তেমনি আল্লাহতায়ালা পুরুষকে বলেছেন নারীর পোশাক আর নারীকে বলেছেন পুরুষের পোশাক অর্থাৎ পুরুষ ছাড়া নারীর চলবে না আর নারী ছাড়াও পুরুষের চলবে না। এ আয়াত অকাট্যভাবেই প্রমাণ করে দেয় যে, পুরুষ-নারী একে অপরের সহায়ক, পরিপূরক এবং একে অন্যের ওপর নির্ভরশীলও বটে।
এ ছাড়াও আল্লাহতায়ারা পবিত্র কোরআনে কারিমে পুরুষদের লক্ষ্য করে বলেন, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার কর, কেননা তারা তোমাদের মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যা। ’
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের সহযোগী ও বন্ধু। ’ এসব আয়াতে নারীর প্রতি পুরুষের দায়বদ্ধতার কথাই তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ একজন মুমিন পুরুষ মাত্রেই প্রতিটি নারীর প্রতি দায়িত্বশীল হবে। মায়ের প্রতি, বোনের প্রতি, স্ত্রীর প্রতি, কন্যার প্রতি এবং সর্বপরি বন্ধু হিসেবে নারীকে যথার্থ সম্মান ও মর্যাদা দিতে, তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করতে হবে। তাদের প্রাপ্য অধিকারগুলো তাদের দিতেই হবে। এসব আয়াতে নারীর প্রতি পুরুষের দায়িত্বের কথাই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
নারীর সঙ্গে পুরুষের বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্বয়ং আল্লাহতায়ালাই গড়ে দিয়েছেন। আর বন্ধুর প্রতি যে বন্ধুর দায়িত্ব সীমাহীন একথাও হয়তো সবারই জানা আছে। মহান আল্লাহর শিক্ষা হচ্ছে, নারীরা পুরুষদের মতোই মানুষ। আল্লাহতায়ালা মানুষ জাতিকে নারী ও পুরুষরূপে সৃষ্টি করেছেন তারই সৃষ্টির নিদর্শন হিসেবে। মানুষ হিসেবে আল্লাহর কাছে নারী-পুরুষ উভয়ের মূল্য, মর্যাদা ও গুরুত্ব সমান। সুতরাং কোনো নারী অবজ্ঞা-অবহেলার করা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘন্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫