ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

‘স্মরণ’

ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর জীবনী

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৫
ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর জীবনী

হাদিসের বিশুদ্ধতা নিরূপণে ইতিহাসে যেসব মহামানব চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, তাদের অন্যতম হলেন ইমাম মুসলিম (রহ.)। খোরাসানের নিশাপুরে ২০৪ হিজরি মোতাবেক ৮২০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

নিশাপুর বর্তমানে ইরানের অন্তর্ভুক্ত।

ইমাম মুসলিম (রহ.) ২১৮ হিজরিতে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ইলমে হাদিস শিক্ষায় মনোযোগ দেন। তিনি জন্মস্থান নিশাপুরের বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেই ক্ষান্ত হননি, তৎকালীন ইলমে হাদিসের সব কেন্দ্রেই ছুটে গেছেন, হাদিসের এক বিশাল ভাণ্ডার আত্মস্থ করেছেন। তিনি একাধিকবার বাগদাদ সফর করেছেন। তার সর্বশেষ বাগদাদ সফর হয়েছিল ২৫৯ হিজরিতে।

২১১ জন বিশিষ্ট মুহাদ্দিসের কাছ থেকে ইলমে হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং হাদিস সংগ্রহ করেন। ইমাম বোখারি (রহ.) ছিলেন ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর উস্তাদ।

ইমাম মুসলিম (রহ.) ইলমে হাদিসের যে বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার সংগ্রহ করেছিলেন, তা শিক্ষা দিয়ে যেমন অসংখ্য মুহাদ্দিস তৈরি করে গেছেন, সেই সঙ্গে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করে জগৎবাসীর জন্য মহামূল্যবান উপহার হিসেবে রেখে গেছেন। সহিহ মুসলিম ছাড়াও ইমাম মুসলিম (রহ.) যেসব গ্রন্থ রচনা করে গেছেন, তার
মধ্যে কয়েকটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হলো—

মুসনাদে কবির, কিতাবুল জামে, কিতাবুল আসমা ওয়াল কুনা, কিতাবুত্ তাময়িয, কিতাবুল ইলাল ওয়া কিতাবুল ওয়াহদান, কিতাবুল ইফরাদ, কিতাবুল আরকান, কিতাবু হাদিসি আমর ইবনে শুয়াইব, কিতাবু মাশায়েখে মালেক, কিতাবু মাশায়েখে শোবা, কিতাবু আওলাদিস সাহাবা, কিতাবু আওহামিল মুহাদ্দিসিন, কিতাবুত তাবাকাত, কিতাবু সুয়ালাতি আহমাদ বিন হাম্বল, কিতাবু মান লাইসা লাহু রাব্বুন ইল্লা ওয়াহিদ ইত্যাদি।

তবে ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর রচনাবলির মধ্যে একমাত্র ‘আস্ সহিহুল মুসলিম’ ছাড়া আর কোনোটাই বর্তমানে খুঁজে পাওয়া যায় না।

মুসলিম শরিফ সংকলন
ইমাম মুসলিম (রহ.) দীর্ঘ পনের বছরের সাধনায় তিন লাখ হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে ‘সহিহ্ মুসলিম’ শরিফ সংকলন করেছেন। ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর বিশিষ্ট সাগরেদ আহমাদ ইবনে সালামা বলেন, ‘আমি মুসলিমের সঙ্গে তার আসসহিহ প্রণয়নকালে পনের বছর লেখালেখির কাজ করেছি (তাজকিরাতুল হুফ্ফাজ)। ইমাম মুসলিম (রহ.) শুধু সহিহ হাদিসের সমন্বয়ে এ মহান গ্রন্থখানা রচনা করেছেন। তাই এর নামকরণ করেছেন ‘আস্ সহিহ। ’

মুসলিম শরিফে পুনরুল্লেখ ছাড়া হাদিসের মোট সংখ্যা চার হাজার, আর পুনরুল্লেখসহ মোট হাদিসের সংখ্যা সাত হাজার ২৭৫টি।

ইমাম মুসলিম (রহ.) তার ‘সহিহ’ রচনার পর বলেছিলেন, ‘মুহাদ্দিসরা ১০ বছর পর্যন্তও যদি হাদিস লিখতে থাকেন, তবুও তাদের অবশ্যই এ বিশুদ্ধ মুসনাদ গ্রন্থের ওপর নির্ভর করতে হবে। ’

বস্তুত ইমাম মুসলিম (রহ.) অত্যন্ত সত্য কথাই বলেছেন। তার মৃত্যুর পর সুদীর্ঘ ১২০০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আজ অবধি মুসলিম শরিফের মানের দ্বিতীয় কোনো গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব হয়নি কারও পক্ষে। ইমাম মুসলিম (রহ.) মুসলিম শরিফ রচনায় শুধু নিজের স্মৃতিশক্তির ওপরই নির্ভর করেননি। তিনি এটি রচনার পর তৎকালীন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসগণের সামনে পেশ করেছেন। তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন, তাদের স্বীকৃতি নিয়ে চূড়ান্ত রচনার কাজটি সমাধা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমি এ গ্রন্থখানা আবু জুরআ আর-রাজির কাছে পেশ করেছি। তিনি যে যে হাদিসের সনদে দোষ আছে বলে ইঙ্গিত করেছেন, আমি তা পরিত্যাগ করেছি, আর যে যে হাদিস সম্পর্কে মত দিয়েছেন যে এগুলো সহিহ, আমি সেগুলো গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছি। ’

বস্তুত বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফের হাদিস বিশুদ্ধতার মানদণ্ডে সমপর্যায়ের হওয়ার কারণেই দু’টিকে একত্রে ‘সহিহাইন’ বলা হয়।

ইমাম মুসলিম (রহ.) তার আসসহিহর ভূমিকায় ‘সহিহ’ রচনার কারণ সম্পর্কে দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছেন-

ক. ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর বিখ্যাত সাগরেদ আবু ইসহাক ইবরাহিম তার কাছে একটি উন্নতমানের সহিহ হাদিসগ্রন্থ সংকলন করার জন্য অনুরোধ জানান। কিতাবের ভূমিকায় তিনি তার ছাত্রের জন্য দোয়া করেছেন,

খ. ইমাম মুসলিম (রহ.) দ্বিতীয় কারণটি এভাবে উল্লেখ করেছেন- কেবল তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে সহিহ হাদিসগুলো বাছাই করার কষ্ট স্বীকার করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। কিন্তু আমি যখন জানতে পারলাম যে, তথাকথিত মুহাদ্দিসরা সাধারণ মানুষের মধ্যে মিথ্যা ও মুনকার হাদিসগুলো ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, তখন তোমার অনুরোধে সাড়া দেওয়া আমার জন্য আরো সহজ হয়ে গেল।

ইলমে হাদিসের এ মহান সাধক ২৬১ হিজরির ২৫ রজব রবিবার মোতাবেক ২৮০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। বর্তমানে ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত নিশাপুরে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘন্টা, মে ১৪, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।