আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমের সূরা ফাতিরে ইরশাদ করেছেন, ‘কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না- যদি সে নিকট- আত্নীয়ও হয়।
সূরা ফাতিরের অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়। যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে যাতে কখনও লোকসান হবে না। পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তাদের সওয়াব পুরোপুরি দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। ’ -সূরা ফাতির: ২৮-২৯
পবিত্র কোরআনে কারিমের হৃদয়-নিংড়ানো এসব বাণী থেকে এটা স্পষ্ট যে, কিয়ামতের দিন সৎকর্ম ও ঈমান ছাড়া আর অন্য কিছুই কোনো কাজে আসবে না। মানুষের ধন-সম্পদ, পদ-মর্যাদা, সন্তান-সন্ততি, দল-বল- এসব কিছুই কাজে আসবে না কবরে চলে যাওয়ার পর থেকে। তাই সেই মহাবিপদের দিনের জন্য এখন থেকেই পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে।
পবিত্র কোরআনের বাণী মতে আমরা জানলাম যে, কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করেন। তাই জ্ঞান অর্জন সবচেয়ে বেশি জরুরি পাপ বর্জনের জন্য। আত্মগঠন ও আত্ম-সংশোধনের ক্ষেত্রে এটাই হওয়া উচিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা যাকে ভালোবাসেন তাকে ধর্মের জ্ঞান দান করেন। ’
বস্তুত বড় বড় পাপগুলো কী কী এবং সেসব এড়ানোর উপায় সম্পর্কে ধারণা অর্জন করার পর আমাদেরকে উন্নত চরিত্র গঠনের জন্য মনোযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, নফল ইবাদতের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ওয়াজিব বা ফরজ দায়িত্বগুলো পালন ও হারাম বর্জন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।
অন্যভাবে বলা যায়, ইবাদতকে একনিষ্ঠ করার জন্য ব্যাপক জ্ঞান চর্চা জরুরি। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আমাদের এটাই চাইতে হবে যাতে তিনি আমাদেরকে সবচেয়ে জরুরি জ্ঞান তথা ধর্মের জ্ঞান দান করেন। যে জ্ঞানের সুবাদে আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো ভালোভাবে পালন করতে পারি এবং আল্লাহ ও তার রাসূলসহ আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তিদের ভালোভাবে জেনে তাদের অনুসরণ করতে পারি। তাদের দেখানো পথে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করতে পারি।
ইবাদতের জন্য জ্ঞান কেন জরুরি- এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রাচীন যুগের ধর্মমনা এক লোক দেখল যে এক জায়গায় লোকজন বিভ্রান্ত হয়ে একটি গাছের পূজা করছে! তাই সে ওই গাছটি কাটার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শয়তান বৃদ্ধ জ্ঞানীর বেশ ধরে তাকে বলল, এ কাজ করো না। এ কাজ জরুরি হলে নবীদের পাঠিয়ে আল্লাহ তা করতেন! কিন্তু ওই লোক শয়তানের কথায় কান না দিয়ে তার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। লোকটি খুব সহজেই শয়তানকে পরাস্ত করে। এবার শয়তান বলল, তুমি গাছটি না কাটলে তোমাকে প্রতিদিন ২টি করে দিনার দেব। লোকটি লোভের ফাঁদে পড়ে ভাবল, তা মন্দ কি! এক দিনার নিজের জন্য রাখব আর এক দিনার আল্লাহর পথে দান করব! সে গাছ না কাটায় কয়েক দিন ধরে বালিশের নীচে ২টি করে দিনার পেতে থাকল।
কিন্তু একদিন ওই ধার্মিক দেখে দিনার আর আসছে না। ফলে সে আবারও গাছটি কাটতে যায়। এবারও সংঘর্ষ হল। কিন্তু এবার শয়তান খুব সহজেই তাকে হারিয়ে দিল। সে প্রশ্ন করল শয়তানকে, এত সহজেই এবার হেরে গেলাম? অথচ সেবার তুমি হেরেছিলে! শয়তান বলল, সেবার তুমি ছিলে আল্লাহর পথে একনিষ্ঠ তাই আল্লাহ তোমাকে জয়ী করেছিলেন। কিন্তু এবার তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গাছ কাটতে আসনি, বরং দিনার না পাওয়ার রাগে গাছ কাটতে এসেছ, তাই সহজেই কুস্তিতে পরাজিত হলে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘন্টা, জুলাই ২৮, ২০১৫
এমএ/