আজ মহান শিক্ষা দিবস। ১৯৬২ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শাহাদতবরণকারী শিক্ষকদের স্মরণে দিবসটি পালন করা হয়।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ও মানব সভ্যতার প্রাণ। মানবাত্মার সুষম বিকাশ ও লালনের বাহন। শিক্ষা জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধির এক নিয়ামক শক্তি, তাই সুশিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির অগ্রগতি এবং ক্রমোন্নতি সম্ভব নয়। প্রকৃত শিক্ষা মানুষের দেহ ও আত্মাকে সুন্দর সুসামঞ্জস্য করে গড়ে তোলে এবং মানুষকে সচ্চরিত্রবান, সুরুচিসম্পন্ন, কর্মদক্ষ, ন্যায়-নিষ্ঠাবান, পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করে তাকে উন্নত এবং সমৃদ্ধ মানবে পরিণত করে। ফলে সে অজ্ঞেয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। যে জ্ঞানের মাধ্যমে তার সুকুমার বৃত্তি বিকশিত হয় এবং মানবিক চেতনার উৎকর্ষ ঘটে।
পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম মানবতার মুক্তির মহাসনদ এবং উন্নত জীবনধারার ব্যবস্থাপক। এখানে নৈতিকতার প্রাণশক্তি স্পন্দিত এবং প্রকৃত শিক্ষার আলো বিচ্ছুরিত। মানুষের জীবনধারা, কর্মপদ্ধতি, আদর্শ, কর্মচাঞ্চল্য, ত্যাগ, সাধনা ও সফলতার সমন্বয় এবং অভিব্যক্তির পরিস্ফুটন ঘটেছে ইসলামে। ইসলাম মানুষকে সর্বদা শিক্ষার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করে এবং আহ্বান করে অজ্ঞতার অমানিশার বুকচিরে সুশিক্ষার আলোর দিকে আসার। ইসলামি জীবন দর্শনে শিক্ষা মানবতার সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ নিশ্চিতকারী এক শক্তি। এ শিক্ষা মানুষের দেহ ও আত্মার পূর্ণতা বিকাশে নিরন্তর প্রয়াসী; যে শিক্ষা সত্যের আবিষ্কার, মিথ্যার অপনোদন, মানবতাবিধ্বংসী সব ধরনের কাজকে পরিহার এবং পাশবিকতাকে নির্মূল করে মানুষের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত গুণাবলির বিকাশ ঘটায়।
কোরআন ও হাদিসে শিক্ষার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা নানা কৌণিকে সাবলীল ভাষায় পরিব্যক্ত হয়েছে। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যাকে হিকমত তথা দ্বীনের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাকে দেওয়া হয়েছে বিপুল কল্যাণ ও সমৃদ্ধি। ’ -সূরা আল বাকারা: ২৬
হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত ও প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বিদ্যার্জনে ব্যাপৃত থাকে এবং সে অবস্থায় তার মৃত্যু সমাগত হয়, জান্নাতে তার এবং নবীদের মধ্যে কেবল একটি ধাপই ব্যবধান থাকবে। ’ -দারিমি
শিক্ষা বিষয়ে এমন অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বিদ্যমান, যা কেবল শিক্ষার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তার প্রতিই নির্দেশ করে। বস্তুত শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের সোপান। শিক্ষা ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি। শিক্ষা ছাড়া ভালো মানুষ হওয়া যায় না। শিক্ষা ছাড়া ভালো মুসলমান হওয়া যায় না। শিক্ষা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার বান্দা হওয়া যায় না। আর তাই দেখা যায় ইসলামের প্রথম বার্তা ছিল, ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাদের সৃষ্টি করছেন। ’ –সূরা আল আলাক: ১
আল্লাহতায়ালার এ বার্তা থেকেই বোঝা যায়, মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে শিক্ষার গুরুত্ব। কোরআন কারিমে রয়েছে শিক্ষা সংক্রান্ত প্রচুর আয়াত। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘জিজ্ঞেস করুন, যারা জানে (আলেম ও জ্ঞানী) আর যারা জানে না (জাহেল ও মূর্খ) তারা উভয় কি সমান হতে পারে?’ –সূরা জুমার: ৯
ইলম বা জ্ঞান সম্পর্কে রয়েছে প্রচুর হাদিস। ইলম (জ্ঞান) ও আলিম (জ্ঞানী) সম্পর্কে রয়েছে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রচুর বাণী। তিনিই বলেছেন, ‘প্রতিটি মুসলিমের (নর ও নারী) জন্য ইলম (শিক্ষা) অর্জন করা ফরজ। ’ -ইবন মাজাহ
বস্তুত ইসলাম ও শিক্ষার পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীরে। বিশেষ করে ইসলামের মূল কথা হলো সব মুসলিমকে অবশ্যই কমবেশি শিক্ষিত হতে হবে। ইসলাম ধর্ম সব ধরনের অজ্ঞতাবিরোধী। তাই ইসলাম অশিক্ষিত লোকদের শিক্ষার অনুগামী হতে বলে। শিক্ষাহীনতাকে ইসলাম ভর্ৎসনা করে। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্খতা মানে শুধু অশিক্ষা নয়। ইসলাম বলে, সত্যের ব্যাপারে অজ্ঞতা এক ধরনের অন্ধতা। বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অনৈতিক গোঁড়ামি এবং চিন্তার ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণও এক ধরনের মূর্খতা। অনেকেই আবার ইসলামি চেতনা, বোধ-বিশ্বাস ও স্বাভাবিক জ্ঞানার্জনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেন। অথচ ইসলামি শিক্ষা, চিন্তা-চেতনা ও কর্মতৎপরতায় জ্ঞানার্জন, চর্চা এবং আধ্যাত্মিকতার মাঝে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
এমএ/