তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আরবি ‘তাহাজ্জুদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ রাত জাগরণ বা নিদ্রা ত্যাগ করে রাতে নামাজ পড়া।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত হননি। তবে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এটা সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ এ নামাজ আদায় করলে অশেষ পুণ্য লাভ করা যায়, কিন্তু আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না।
তাহাজ্জুদ নামাজ রাত দ্বিপ্রহরের পরে পড়তে হয়। মধ্যরাতে যখন লোকেরা গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে এ নামাজ আর পড়া যায় না। যদি রাত দ্বিপ্রহরের পর নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে এশার নামাজের পর এবং বিতরের আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া অবকাশ রয়েছে। অবশ্য তাহাজ্জুদ নামাজ রাত দ্বিপ্রহরের আগে পড়লে সওয়াব কম পাওয়া যায়। রাতের শেষাংশে পড়লে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজ চার রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজ কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত পড়েছিলেন। তবে দুই রাকাত-দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ কমপক্ষে ৪ রাকাত আদায় করা উচিত। কিন্তু যদি কেউ এ নামাজ ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তার তাহাজ্জুদ আদায় হবে। এটাকে অবশ্য অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ নিরুৎসাহিত করেছেন। আলেমরা তাহাজ্জুদের নামাজের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার কথাও বলেছেন। অর্থাৎ একদিন অনেক রাকাত, আরেক কম কিংবা আরেকদিন পড়াই হলো না- এমনটি নয়। যাই পড়া হোক সেটা যেনো নিয়মিত হয়।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী। ’
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কালে কেরাতের সময় কোরআনে কারিমের আয়াত যথাসম্ভব বেশি পরিমাণে তেলাওয়াত করা উত্তম। যদি বড় সূরা মুখস্থ থাকে, তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজে বড় সূরা তেলাওয়াত করা। বড় সূরা মুখস্থ না থাকলে যে কোনো সূরা দিয়েই নামাজ আদায় করা যাবে। তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা কোনো নিয়ম নেই। দুই রাকাত করে এই নামাজ আদায় করতে হয়। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়ার পর, অন্য যে কোনো সূরা মিলানো। এই নিয়মই উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সব নফল ইবাদত অপেক্ষা অধিক এবং এটি আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। যারা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন এবং অপরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করেন, তারা আল্লাহর অপার রহমতের মধ্যে বিচরণ করেন।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহমত নাজিল করেন, যিনি রাতে নিদ্রা থেকে জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন এবং তার স্ত্রীকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দেন। অতঃপর তিনি (তার স্ত্রী) তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। এমনকি যদি তিনি (স্ত্রী) ঘুম থেকে জাগ্রত হতে না চান, তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেন। ’ -আবু দাউদ ও নাসাঈ
হাদিসে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি অধিক সম্মানের অধিকারী বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমানদের মধ্যে আল কোরআনে অভিজ্ঞ ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি সম্মানের অধিকারী হবেন। ’ –বায়হাকি
তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এ জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো বিনা ওজরে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ছাড়তেন না। সাহাবিরাও নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
এমএ/